ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৭ই নভেম্বর ২০২৪, ২৪শে কার্তিক ১৪৩১


কাঁচা হলুদের যত গুন


৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৩৭

ফাইল ফটো

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নিত্যদিনের কাজে হলুদের ব্যবহার করে আসছে। তা রান্নার ক্ষেত্রেই হোক বা রূপচর্চার ক্ষেত্রে হোক, হলুদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু জানেন কি হলুদ ওষুধ হিসেবেও দারুণ কাজ করে। কাঁচা হলুদ বহু রোগ থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সক্ষম। তাই আজ আপনাদের জন্য কাঁচা হলুদের গুণাগুণ গুলো  দেয়া হলো।

১) হলুদ শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সক্ষম। এটি চর্বি বিপাকে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। হলুদের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থ কারকিউমিন, শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায় এবং শরীরের কলাগুলোকে বাড়তে দেয় না। যার অজন কমাতে সাহায্য করে।

২) কাঁচা হলুদের সাথে দুধের সর মিশিয়ে, সেই মিশ্রণ মুখে মাখুন ফেস প্যাক হিসাবে। নিয়মিত লাগালে বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।

৩) কাঁচা হলুদ ও শুকনো কমলার খোসা একসঙ্গে বেটে সেই মিশ্রণ স্ক্রাবার হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের জেল্লা ফেরাতে সাহায্য করবে এই স্ক্রাবার।

৪) হলুদের মধ্যে ফিনোলিক যৌগিক কারকিউমিন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। হলুদ যখন ফুলকপির সাথে মিলিত হয় তখন এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং বিদ্যমান প্রস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।

৫) যাঁরা ব্রণর সমস্যায় ভুগছেন তাদের কাছে কাঁচা হলুদ দারুণ উপকারী একটি জিনিস। কাঁচা হলুদ বাটা, আঙ্গুরের রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রনের উপরে লাগান। একটু পরে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ মিলিয়ে যাবে এবং এতে ইনফেকশনেরও ভয় থাকবে না।

৬) সূর্যের তাপের কারণে ত্বকে ট্যান হয়ে থাকে। কাঁচা হলুদ বাটার মধ্যে দই মিশিয়ে লাগালে এ ট্যান দূর হবে। রোদে পোড়া ভাব দূর করে কাঁচা হলুদ বাটা ।

৭) সর্দি-কাশি নিরাময়য়ে হলুদ এক অব্যর্থ ওষুধ৷ কাশি কমাতে হলে এক টুকরো কাঁচা হলুদ মুখে রাখুন। এছাড়া এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়েও পান করতে পারেন। দেখবে খুব তাড়াতাড়ি আরাম পাবেন।

৮) গা,হা,পা-এ ব্যথা হলে দুধের মধ্যে একটু হলুদ মিশিয়ে খেলে তাতে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও জয়েন্টের ব্যথা হলে হলুদের পেস্ট তৈরি করে প্রলেপ দিলে এ ব্যথা দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
৯) কাঁচা হলুদ একটি প্রাকৃতিক এন্টিসেপ্টিক। তাই কাঁটা এবং পোড়া জায়গায় হলুদ বাটা লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি ব্যথা এবং দাগের উপশম ঘটে।

১০) স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধকারী ও অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময়কারী।

১১) শিশুদের লিউকেমিয়া ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে কাঁচা হলুদ।
১২) হলুদ কেমো ড্রাগ এর প্রভাব এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে।
১৩) হলুদ টিউমার হওয়া বন্ধ ও নতুন রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করে।

১৪) যেকোনো চর্ম রোগের জন্য হলুদ অনেক উপকারী। কাঁচা হলুদের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে শরীরে মাখলে একজিমা, অ্যালার্জি, র্যা শ, চুলকানি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৫) হলুদের মানসিক অবসাদ রোধ করতে ব্যবহৃত অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্টের কাজও করে । এ ছাড়া, এই উপাদানে রয়েছে অ্যাস্পিরিনের গুণ। এর প্রয়োগে ভ্যাস্কুলার থ্রম্বোসিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্বের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১৬) হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
১৭) হলুদ গায়ের ত্বক ফর্সা ও লাবণ্যময় করে তোলে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে, ধীরে ধীরে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়।

১৮) হলুদের অন্য এক উপাদান ‘পলিফেনল’ চোখের অসুখ ‘ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস’ সারাতে কর্টিকোস্টেরয়ডের কাজ করে। উল্লেখ্য, এই রোগের প্রকোপে চোখে প্রচণ্ড জ্বালা ও প্রদাহ দেখা যায়।
১৯) মুখে জ্বালা-পোড়া করলে গরম পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে কুলকুচি করুন।
২০) শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে লাগাতে পারেন।


২১) পেটের বায়ু ও পুরাতন ডায়রিইয়াঃ পেটে বাতাস হলে ও পুরনো ডায়রিয়ায় হলুদের গুঁড়ো বা রস পানিসহ খেলে খুবই উপকার হয়।


২২) কৃমি হলে কাঁচা হলুদের রস ১৫-২০ ফোঁটা (বয়সানুপাতে) সামান্য লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হয়। কৃমি দমনে কার্যকর ওষুধ, তাই একে কৃমিঘ বা কৃমিনাশকারীও বলে।

২৩) লিভারের সমস্যায় পাণ্ডু রোগে (জন্ডিস) গায়ের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে আসছে বুঝতে পারলে হলুদের রস ৫ থেকে ১০ ফোঁটা থেকে শুরু করে বয়সানুপাতে ১ চা চামচ পর্যন্ত একটু চিনি বা মধু মিশিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা বহু আগে থেকে চলে আসছে। আবার একটু হলুদ গুঁড়া তার দ্বিগুণ পরিমাণ দইয়ে মিশিয়ে খেলে পিলে ও যকৃতের দোষ এবং জন্ডিস সারে। মধুসহ হলুদ খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

এল,এম