ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


করোনাভাইরাস: চিকিৎসকের মৃত্যুর পর সেই সাংবাদিকও নিখোঁজ


১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২৪

করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্তকারী চিকিৎসক ডা. লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যু ঘোষণার পরে ভাইরাসটির কেন্দ্রভূমি উহানের সড়কের বিপর্যস্ত অবস্থা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা সেই সাংবাদিক চেন কুইশিও নিখোঁজ হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছে না। তার মোবাইল ফোনে কল ঢুকলেও কোনো জবাব আসছে না।-খবর ডেইলি মেইলের

এই চীনা নাগরিক সাংবাদিকের প্রতিবেদনে উহানের লোমহর্ষক ঘটনাবলী উঠে এসেছে। যেমন, হুইলচেয়ারে মৃত স্বজনের পাশে বসা এক নারী তার পরিবারকে পাগলের মতো ফোন করছেন। রোগীদের এই অসহায় পরিস্থিতি হাসপাতালের অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সরঞ্জামাদির অভাবের বিষয়টিই বলে দিচ্ছে।

তার উধাওয়ের বিষয়টি এমন এক সময় গণমাধ্যমে চলে এসেছে, যখন চীনে বীর বলে আখ্যায়িত চিকিৎসক ডা. লি ওয়েনলিয়াং মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উহানের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে রোগীদের সেবা করার সময় তার শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে বলেই দাবি করা হচ্ছে।

এদিকে চীনের নাগরিক সাংবাদিক ফ্যাং বিন একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যাতে দেখা গেছে, বাসভর্তি মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে তাকে আটক করা হলেও ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।

বড় বড় হাসপাতাল, বাড়িগুলো মৃতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও উহানের আবাসিক এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন চেন কুইশিও। এই ভাইরাস নিয়ে তথ্য বের করতে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে তিনি সরাসরি কথা বলেন।

টুইটার ও ইউটিউবে তার ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। যদিও ভিডিও শেয়ারের এসব সামাজিকমাধ্যম চীনে নিষিদ্ধ, কিন্তু অন্য সফরওয়্যার দিয়ে তা দেখা সম্ভব।

নিখোঁজ হওয়ার আগে ফ্যাং ক্যাং আশ্রয়কেন্দ্র হাসপাতাল পরিদর্শনের কথা ছিল তার।

তার পক্ষে কথা বলার অনুমতিপ্রাপ্ত এক বন্ধ টুইটারে বলেন, যখন চেন কুইশিওকে তুলে নেয়া হয়েছে, তখন তার স্বাস্থ্য ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল। কাজেই ভালোভাবেই তিনি ফিরে আসবেন বলে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি এখনো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

তাকে নিরাপদ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তার মা একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সিএনএনকে তার এক বন্ধু বলেন, তার শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আশঙ্কা হচ্ছে, যখন তিনি নিখোঁজ হন, তখন এই ভাইরাস তার শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে।

নির্মাণাধীন হাসপাতালগুলোর অবস্থা সরেজমিনে দেখতে যান এই সাংবাদিক এবং উহানের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন।

আটকের আগে এক পোস্টে তিনি বলেন, স্টেডিয়ামে একহাজার বেড বসানো সম্ভব, কিন্তু কীভাবে এতগুলো লোক একসঙ্গে খাচ্ছেন? কীভাবে তারা গোসল কিংবা ওয়াশরুমে যাচ্ছেন?

‘২৪ ঘণ্টাই কি তাদের মাস্ক পরতে হবে? সেখানে কি যথেষ্ট অক্সিজেন আছে, যেখানে একটিমাত্র ভেন্টিলেটর এবং কখন সুনির্দিষ্ট ঔষধ পর্যাপ্ত আসবে?’

তিনি বলেন, এসব সমস্যা আমাকে বেশ কয়েকদিন ধরে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। রোগীদের অবস্থাও নাজুক। তাদের পারিবারিক যত্ন দরকার। এখন প্রতিটি পদক্ষেপই কঠিন।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এক মর্মান্তিক ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক বাবা জানান, তাকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে আসার পর কীভাবে তার প্রতিবন্ধী ছেলে বাড়িতে না-খেয়ে যত্নের অভাবে মারা গেছে।

এছাড়া চলতি মাসে উহান স্কয়ার কেবিন হাসপাতালের সারি সারি বেড ও স্তূপ করে রাখা চিকিৎসা সামগ্রির একটি ভিডিও পোস্ট করেন এই সাংবাদিক।

তার বিবরণ মতে, এই নির্মাণাধীন হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় এক চিকিৎসাক তাকে বলেন যে এটা এক ধরনের যুদ্ধক্ষেত্র হাসপাতাল কিংবা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের মতো দেখতে।

তিনি বলেন, সংক্রামক রোগটিতে আক্রান্তদের নির্জন এলাকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে পরস্পর সংক্রমণ এড়িয়ে চলবেন, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত।

সরকারি বিবৃতি মতে, জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও শুক্রবার সকালের দিকে মারা গেছেন ডা. ওয়েনলিয়াং। এরপরেই এই সাংবাদিকের নিখোঁজের খবর এসেছে।

পুলিশের হয়রানির শিকার হওয়ার পরেই চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. ওয়েনলিয়াং মানুষের নজরে আসেন। ৩০ ডিসেম্বর একটি সি ফুড মার্কেট থেকে এই ভাইরাস ছড়েয় পড়ার পর তার বিরুদ্ধে ভুয়া খবর প্রচারের অভিযোগ তোলেন কর্তৃপক্ষ।