গর্ভবতী মেয়েকে জোর করে খদ্দেরের বিছানায় পাঠালো বাবা

ভারতে এখনও বেশিরভাগ পরিবার মেয়ে সন্তানের চাইতে ছেলে সন্তানদের বেশি পছন্দ করে। কিন্তু যখন হিনা জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার বাবা-মা রীতিমত উৎসব উদযাপন করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই উদযাপনের পেছনে ছিল বিচিত্র একটি উদ্দেশ্য। হিনা দেশটির পশ্চাৎপদ বাচ্ছারা সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। এই সম্প্রদায়ে শত শত বছর ধরে এখন পর্যন্ত একটি প্রথা প্রচলিত আছে। যেখানে সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের পরিবারে জন্ম নেয়া সবচেয়ে বড় মেয়েকে পতিতাবৃত্তির দিকে ঠেলে দেয়। এই পতিতা বাণিজ্য শুরু হয় মেয়ের মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর বয়সেই।
পরিবারের পুরুষ সদস্য থেকে শুরু করে বাকি সবার জীবন ওইটুকু মেয়ের আয়ের ওপরই নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে আবার মেয়েটির বাবা অথবা ভাই দালাল হিসেবে কাজ করেন। যখন মেয়েটির বয়স হয়ে যায়, তখন তার স্থলে জায়গা করে নেয় তারই ছোট বোন।
এই বাচ্ছারা সম্প্রদায়ে বিয়েটাও হয় ভিন্নভাবে। এখানে বিয়ে দেয়ার সময় কনের পরিবার বরের পরিবারের কাছ থেকে বড় অংকের অর্থ দাবি করে। যেটাকে অনেকেই উল্টো যৌতুক হিসেবে আখ্যা দেন।
পতিতাবৃত্তি বিষয়ে হিনার বক্তব্য, হিনাকে জন্মের পর থেকে এই ধরণের জীবনের জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং তারপর খুব অল্প বয়সে তাকে এই কাজে জোরপূর্বক ঠেলে দেয়া হয়। হিনার কথায়, আমাকে যখন এই পেশায় ঠেলে দেয়া হয়। তখন আমার বয়স মাত্র ১৫ বছর। পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে আমাকে আমার মা ও নানীর দেখানো পথে চলতে হয়েছে।
প্রতিদিন তার কাছে গ্রামীণ ধনী থেকে শুরু করে ট্রাকচালক পর্যন্ত একাধিক খদ্দের আসতো। হিনা বলেন, ১৮ বছর বয়সে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার সঙ্গে কত অন্যায় হয়েছে। ভীষণ রাগও হয়েছিল তখন। কিন্তু এছাড়া আমার আর কিই বা করার ছিল?
ভারতের বাচ্ছারা সম্প্রদায়ের মানুষেরা সাধারণত ভীষণ দারিদ্র্যপীড়িত। পরিবারের জন্য উপার্জন এবং আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে তারা নারী সদস্যদের ওপর নির্ভর করে। বাচ্ছারা একসময় যাযাবর উপজাতি গোষ্ঠী ছিল। পরে তারা কেন্দ্রীয় রাজ্য মধ্য প্রদেশের তিনটি জেলায় ছড়িয়ে যায়। এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেশিরভাগ গ্রামীণ এলাকা বা মহাসড়কের পাশে থাকে। যেখানে ট্রাক ড্রাইভাররা বিরতি নিয়ে থাকে।
যে কৌশলে চলছে এই পতিতা বাণিজ্য, এই সম্প্রদায়ের অল্প বয়সী মেয়েরা স্থানীয়ভাবে খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিত। তারা দলবেঁধে না হয় একা একাই খদ্দের ধরার জন্য অপেক্ষা করে।
এছাড়া পথের দুই পাশে ছোট দোকানের মত বুথ থাকে। সেখানে মেয়েটির দালাল হিসেবে তার ভাই না হয় বাবা খদ্দেরকে নিমন্ত্রণ জানায়। তারা চালকদের সঙ্গে ১০০ থেকে ২০০ ভারতীয় রুপিতে চুক্তি করে। একটি কুমারী মেয়ের জন্য সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যায়। খদ্দের প্রতি সেটা পাঁচ হাজার রুপি হতে পারে।
এ সম্পর্কে হিনা বলেন, প্রতিদিন দিনের বেলা প্রায় চার থেকে পাঁচজন পুরুষ আসে। রাতের বেলা আমরা হোটেল বা কাছাকাছি অন্য কোথাও যাই। সবসময় সংক্রমিত রোগে ভোগার ঝুঁকি থাকে।
পতিতাবৃত্তি করতে গিয়ে অনেক মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এই পেশায় আসার কয়েক বছরের মাথায় হিনা একটি মেয়ে শিশুর জন্ম দেয়। মা হওয়ার পরও তাকে আরও বেশি বেশি পরিশ্রম করার জন্য চাপ দেয়া হতো। সন্তানদের যত্ন নেয়ার জন্য আরও অর্থ উপার্জন করতে চাপ দেয়া হয়, জানান হিনা।
একজন যৌনকর্মী হওয়ার অর্থ হচ্ছে, সে তার সম্প্রদায়ের মধ্যে কাউকে বিয়ে করার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অবশেষে হিনা স্থানীয় একটি এনজিওর সহায়তায় এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।
স্থানীয় পুলিশ সুপার মনোজ কুমার সিং জানান, গত কয়েক মাসে তারা এই এলাকা থেকে প্রায় ৫০টি মেয়েকে উদ্ধার করেছেন। এছাড়া দুই বছর বয়সী একটি মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন। তাকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের যেখানে এই বাচ্ছারা সম্প্রদায় বসবাস করে, সম্প্রতি সেখানে একটি আইন পাস করে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক কেউ ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে তার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।