ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ঠাকুরগাঁওয়ে করোনায় ৩’হাজার কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকের করুণ দশা


৩ আগস্ট ২০২১ ১৯:৫৮

ফাইল ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের করুণ অবস্থা দেখা দিয়েছে। অভাবের তাড়নায় ছাড়ছেন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকতার মত মহান পেশা।


ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় প্রায় ১০০টি ও সমগ্র জেলায় ৩০০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারি সম্পৃক্ত রয়েছেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে চরম হতাশায় পড়েছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারিরা।


জীবন বাঁচাতে শিক্ষকতা পেশা ছেড়েছেন অনেকে, ঋণ নিয়ে মুদির দোকানও খুলেছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা অনেকেই।
করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা।


এ অবস্থায় সংসারের আর্থিক দৈন্যতা কাটাতে অনেকেই শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়েছেন অন্য পেশায়। তাই এই সমস্যা সমাধানে সরকারি প্রণোদনাসহ যত দ্রুত সম্ভব সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।আর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রণোদনার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানালেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।


অনেক বছর ধরে কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের গৃহশিক্ষক হিসেবে যারা কাজ করে উপার্জন করতেন তাদের করুণ অবস্থা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। প্রথম কিছুদিন ঋণ করে সংসার চালাতে হয়েছে।

কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় চরম হতাশায় পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে ছাড়ছেন মহান পেশা শিক্ষকতা। তারা জানান, লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করা সম্ভব হয়নি। পরে নিজ এলাকার কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতার চাকরি নেন এবং বাড়তি সময়ে টিউশনি করতেন অনেকেই। করোনার কারণে উপার্জন বন্ধ হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তারা। এই অবস্থায় কুল-কিনারা না পেয়ে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে মুদিখানার দোকান দিয়েছেন অনেকেই। এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।


এ অবস্থা শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের নয় পুরো দেশের অনেকেই এখন শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা।
পীরগঞ্জ উপজেলার ইক্বরা কেজি স্কুলের পরিচালক বাবলুর রশিদ জানান, স্কুল বন্ধ থাকলেও সংসারের খরচ বন্ধ নেই। গত কয়েকমাসে খুব কষ্টে কাটছে দিন স্টাফদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে বেতন না পেয়ে।


পীরগঞ্জ উপজেলার ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি আব্দুস সোবহান জানান, স্কুল বন্ধ, তাই বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তাদের শিক্ষকরা। কবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা জানা নেই। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে অনেক বিপদে পড়তে হবে শিক্ষকদের।


ঠাকুরগাঁও রিয়েল পাবলিক স্কুলের শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, করোনার কারণে হাতে জমানো যে সামান্য টাকা ছিল তা দিয়েই কিছুদিন সংসার চালান। পরে আর্থিক সংকটে পড়ে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিন কাটছে।


সোনালী শৈশব বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষক জালাল উদ্দীন জানান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছেন। অথচ মানুষ গড়ার কারিগর কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের জন্য কোনো ধরনের সহায়তার ব্যবস্থা নেই। তাই এই দুঃসময়ে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করনে তিনি।


ঠাকুরগাঁও জেলা কিন্টারগার্ডেন এন্ড প্রিক্যাডেট স্কুল সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম বেলাল জানান, একটি শিশুর প্রথম শিক্ষাজীবন শুরু হয় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের হাত ধরে। অথচ এই শিক্ষকরাই সরকারি সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই আবারো স্বাভাবিক জীবনে ঘুড়ে দাঁড়াতে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার অনুমতি দেয়া প্রয়োজন।


সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জনান, করোনাকালীন বেসরকারি শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে সরকারি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা পেলে অবশ্যই তাদের জন্যে বিশেষ সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।