ঢাকা রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


১৫টি রিক্রটিং এজেন্সীর সিন্ডিকেটে জিম্মি  লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমবাজার


২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৯:০৯

প্রতিকি

দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশীদের জন্য লিবিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও ১৫ রিক্রটিং এজন্সেীর সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে লিবিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে লিবিয়ায় বা্ংলাদেশীদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারনে ঢাকাস্থ লিবিয়ান দূতাবাস সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া পাসপোর্ট জমা ও ভিসা স্ট্যাম্পিং এ গড়িমশি করে আসছে। যদিও এ ব্যপারে বায়রার হস্তক্ষেপে গত রোববার (২৪ অক্টোবর, ২০২২) থেকে সিন্ডিকেটের বাইরে পাসপোর্ট গ্রহন ও ভিসা ডেলিভারী দেওয়া শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যে সকল পাসপোর্ট জমা হয়েছে ভিসা স্ট্যাম্পিং এর পরে সেই সকল পাসপোর্ট ফেরত দিতে অনৈতিকভাবে পাসপোর্ট প্রতি অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে।

সোহেল আহসান খান একজন জনশক্তি রপ্তানীকারন ব্যবসায়ী। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য সিন্ডিকেটের একজন প্রভাবশালী সদস্য মেসার্স সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রটিং এজেন্সীর ম্যানেজিং পার্টনার এমডি কেফায়েতুল্লাহ মামুন এর কাছে ১২টি পাসপোর্ট জমা দেন। শুরুতে স্ট্যাম্পিং বাবদ একশত ৫০ ডলার দেয়ার কথা থাকলেও স্ট্যাম্পিং শেষে পাসপোর্ট আটকে রেখে অতিরিক্ত ১ হাজার পাঁচশত ডলার দাবি করেন কেফায়েতুল্লাহ। এরপর থেকে শুরু হয়রায় জটিলতা। ভুক্তোভোগিদের অভিযোগ, এ সিন্ডিকেট পাসপোর্ট আটকে রেখে অনৈতিক টাকা দাবি করছে, ফলে লিবিয়াগামী শ্রমিকরা পড়েছে ভয়ানক বেকায়দায়। এদিকে কয়েকজন ভুক্তেভোগির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ আগামি ৯ নভেম্বরে, ২০২২ এ শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায়, অতি স্বত্ত্বর ভিসাসহ পাসপোর্ট ফেরত না পেলে তাদের লিবিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রটিং এজেন্সীর ম্যানেজিং পার্টনার এমডি কেফায়েতুল্লাহ মামুন এর সাথে ফোনে এবং বার্তা প্রেরনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোন ধরনের উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জনশক্তি রপ্তানীকারীদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রটিংএজেন্সীজ (বায়রা) এর সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, বাংলাদেশের বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনের শতকরা ৫৫ ভাগ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমি্টেন্স থেকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এবং তার অধীনস্ত দপ্তরসমূহ সহ কেউ এর উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনা বা এই সেক্টরকে তেমন গুরুত্ত্ব দেয়না। তারপরও আবার একটি চক্র আছে, যারা দেশের জনশক্তি রপ্তানী সেক্টরটিকে ধংস করার জন্য তৎপর রয়েছে। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরী বলে তিনি মনে করেন। দির্ঘদিন পরে লিবিয়ায় বাংলাদেশী জনশক্তি রপ্তানীর সুযোগ সৃষ্টি হলেও ১৫টি রিক্রটিং এজেন্সীর সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের কারনে লিবিয়ায় পূনরায় জনশক্তি রপ্তানীতে হুমকি হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বায়রা সভাপতি আরও বলেন, তাদের পক্ষ থেকে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে বায়ারার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে ঢাকাস্থ লিবিয়া দূতাবাসে ও বায়রার পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। এর পরিপ্রক্ষিতে গত রববিার (২৪ অক্টোবর, ২০২২) প্রথম সিন্ডিকেটবিহীন ভিসা স্ট্যাম্পিংসহ পাসপোর্ট বিতরন শুরু করেছে ঢাকাস্থ্য লিবিয়ান দুতাবাস।

তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানীতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নয় বরং সিন্ডিকেটমুক্ত পরিবেশ চাই। তিনি আরও বলেন, খুব শীঘ্রই লিবিয়া থেকে ডেলিগেশন টিম বাংলাদেশে আসবে। তারা শুধুমাত্র সিন্ডিকেটই নয়, স্বল্প খরচে লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়া সহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহনে তারা দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোপ আলোচনা করবেন।

আবুল বাশার বলেন, সিন্ডিকেটমুক্ত হলে খুবই কম খরচে বাংলাদেশের শ্রমিকরা লিবিয়া যেতে পারবে। সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রটিং এজেন্সীর ম্যানেজিং পার্টনার এমডি কেফায়েতুল্লাহ মামুন ১২টি পাসপোর্ট আটকে রেখে অতিরিক্ত অনৈতিকভাবে প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য ১৫০০ ডলার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেফায়েতুল্লাহ জনশক্তি রপ্তানীতে মারাত্বক ক্ষতি করে আসছে। সে এই সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করে আসছে।

লিবিয়া উত্তর আফ্রিকার সমৃদ্ধশালী একটি মুসলিম রাষ্ট্র। সেদেশে বাংলাদেশি দক্ষ-অদক্ষ কর্মীর
অভিবাসন হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়ে আসছে। সেখানে অন্যান্য দেশের
তুলনায় অভিবাসন ব্যয় কম, কিন্তু মাসিক বেতন-ভাতা বেশি। লিবিয়ায় ভারত,পাকিস্তান ও
শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বেশি। কারণ, বাংলাদেশীদের সে দেশের আইন-শৃংখলা মান্য করা ও আচরণগত সুনাম রয়েছে।

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনকালের শেষ সময়ে ও পরবর্তী বছরসমূহে সে দেশে
অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও স্থানীয় মিলিশিয়া কর্তৃক আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় ২০১২ সালে
বাংলাদেশ সরকার কর্মী প্রেরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ
লিবিয়ার বিবাদমান গোষ্ঠীর আন্তকলহ দূর করার উদ্যোগ নিয়ে গঠিত নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে
সমর্থন দেয়। ২০২০ সালে এটি বাস্তবে রূপ নেয় এবং ২০২১ সালে জিএনইউ সরকার পূর্ণাঙ্গ
ক্ষমতা লাভ করে। লিবিয়ার বর্তমান সরকার দেশ গঠনে মনোযোগী হয়ে বৈদেশিক জনশক্তি
আনায়নের উদ্যোগ নেয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের ক্ষেত্রে
লিবিয়া সরকার অসাধারন উদারতায় Visa Approval প্রদান করছে। এর ধারাবাহিকতায় সে দেশের Labour Ministry and Immigration Department যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছে।