ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১


প্রণোদনা প্যাকেজ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়


২৯ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৩৩

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে মনিটরিং কাজ পরিচালনা করবে। মনিটরিংয়ের মূল কাজ হবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা। পাশাপাশি প্যাকেজের অর্থ কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাদের জন্য প্যাকেজ করা হয়েছে তারা সহায়তা পাচ্ছে কি না, কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছে কি নাÑ তাও খতিয়ে দেখা হবে। মনিটারিং কাজটি করার জন্য আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হবে। কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালেয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডিদের রাখা হবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হবে অর্থ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিবকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার জানান, প্রণোদনার ঋণ ব্যাংক-গ্রাহক ভিত্তিতে হলেও গ্রাহককে প্রণোদনার ঋণ পেতে আবেদন করতে হবে। আবেদনের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা পাঠাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ।

জানা গেছে, সরকার যেসব প্রণোদনা দিয়েছে তার সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সার-সংক্ষেপ তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সার-সংক্ষেপে প্রণোদনার অর্থ কিভাবে ব্যয় হবে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কোন কোন খাত এতে উপকৃত হবে তাও বলা হয়েছে। সার-সংক্ষেপে প্রণোদনা বাবদ সরকারের ভর্তুকি ও সুদ ব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সরকারি ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অ্যাকশন প্ল্যানের বিস্তারিত বর্ণনাও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং মন্ত্রণালয়গুলো একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। অ্যাকশন প্ল্যানটি ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সবাই।

প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন অবস্থা বিদ্যমান। এই সময়ে বন্ধ রয়েছে কল-কারখানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, একই সময়ে গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক খাতে ভয়াবহ স্থবিরতা নেমে এসেছে। এর ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ দেশের সব জনগণ। এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

এই প্যাকেজগুলো হলো :

প্যাকেজ-১ ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেয়া হয়। এতে ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়নের ঘোষণা দেয়া হয়। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।
এ ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বহন করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিøষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।

প্যাকেজ-২ ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান- ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা দেয়া হবে। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।
এ ঋণের সুদের হারও হচ্ছে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-৩ বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার লাইবর + ১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২.৭৩ %) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

প্যাকেজ-৪ প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণসুবিধা চালু করবে। এ ঋণের সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

প্যাকেজ-৫ এর আগে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্যাকেজটি বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এটির আওতায় ৮০ ভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্ট কারখানা শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন প্রদান করা হবে।
এ ছাড়া আরো তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাত নিয়েও একটি প্যাকেজ রয়েছে। এসব প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হলে সরকারকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন পড়বে বলে জানা গেছে।