ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩২

সদরঘাটে চাঁদাবাজির মহাউৎসব, চরম হয়রানির শিকার যাত্রীরা


৪ জুন ২০১৯ ০৬:১৩

নতুনসময় ছবি

রাজধানীর সদরঘাটে চলছে চাঁদাবাজির মহাউৎসব ঘাট শ্রমিকদের। আর কুলিদের হাতে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন অসহায় দুর পাল্লার যাত্রীরা। অথচ যাত্রীসেবার জন্য সরকারি পয়সায় দৈনিক ভাতা দিয়ে কুলিদের লালন-পালন করছেন ঢাকা সদরঘাট নদী বন্দর কর্তৃপক্ষরা।

বিকেল ৪টার দিকে  সদরঘাট টার্মিনালে আসেন চাঁদপুর থেকে এমভি রাসেল-৩ লঞ্চ। ওই লঞ্চে ঢাকায় এসেছেন হোসেন নামের এক যুবক। ছোট ব্যাগ ও বস্তায় কিছু আম, বেগুন, কচুর শাক ও ডাটা শাক নিয়ে এসেছেন তিনি। টার্মিনালে নামার আগেই লঞ্চের ডেকে উঠে হলুদ জামা পরা একদল কুলি। ব্যাগটি দেখা মাত্রই ইমরান ও তার সঙ্গে আসা সবাইকে ঘিরে রাখেন। তাদের সঙ্গে থাকা চটের ব্যাগ, বস্তার জন্য ঘাটের টাকা দিতে হবে বলে ১৫’শ টাকা দাবি করেন কুলিরা। মালামাল নিজে বহন করলেও টাকা দিতে হবে হোসেনকে ৩০০ টাকা দিতে চাওয়ায় ব্যাগ নিয়ে টানা হেঁচড়া ও হুমকি-ধমকিও দেয় কুলিরা। সংঘবদ্ধ এই চক্র এভাবে ব্যাগ, বস্তা, লাগেজ সঙ্গে থাকা লঞ্চ যাত্রীদের টার্গেট করে এবং চাঁদাবাজি করে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এছাড়াও রফিক নামের এক সৌদি প্রবাসী জানান, আমি ঈদ উপলক্ষে ছুটিতে দেশের বাড়িতে যাচ্ছি। লঞ্চঘাটে আসা মাত্রই একদল কুলিরা আমার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখেন। এমনকি তারা আমার চেহারা শরিরের দিকেও তাকায়। কুলিরা হঠাৎ এসেই ব্যাগ, ল্যাকেজ মাথায় উঠিয়ে বলে কোন লঞ্চে যাবেন, আমি বলি আপনার খরচ কত, প্রশ্নের উত্তরে কুলি বলে ১০হাজার টাকা দিতে হবে। তারপর বলেছি আপনার ল্যাকেজ,ব্যাগ উঠানোর দরকান নেই আমি উঠাবো। কুলি বললো এই ব্যাগ,ল্যাকেজ আপনি উঠালেও ৫হাজার টাকা দিতে হবে, নইলে এখান থেকে এগুলো যাবে না।

ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, সদরঘাটের টাকার নাম করে চাঁদা তোলা তো দূরের কথা যাত্রীদের অনুমতি ছাড়া তাদের মালামালে হাত দেয়ারও সুযোগ নেই।

তথ্যে জানাযায়, চাঁদাবাজি আর যাত্রী হয়রানি নয় সদরঘাট টার্মিনালে চলছে নানা অনিয়ম। যার পেছনে রয়েছে শক্তিশালী শেল্টার দাতা।কুলিদের মাধ্যমে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা টাকার অংকটা অনেক বড় হওয়ায় এর পেছনে রাজনৈতিক বড় সিন্ডিকেট রয়েছে যা শক্তিশালী।

সদরঘাট টার্মিনালে নিউ ভিশন ইকোসিটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০৪ জন কুলি বা ঘাট শ্রমিক কাজ করেন বিআইডবিøউটিএ-এর জন্য। নিউ ভিশন ইকোসিটি লিমিটেডের পরিচালক দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আওয়ামী যুবলীগের নেতা শিপু আহমেদ। ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, নিউ ভিশন ইকোসিটি লিমিটেডের অধীনে নেয়া ঘাট শ্রমিকদের দৈনিক ৩৬৫ টাকা ভাতা হিসেবে দেয়া হয়। তারপর কেন চাদাঁবাজি করবে।

লঞ্চে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের নিয়মিত যাত্রী শামীম বলেন, সদরঘাট টার্মিনালে চাঁদাবাজি ও যাত্রী হয়রানির এ দৃশ্যটি প্রতিদিনের।

সোহেল রানা বলেন, অভিযোগ দিয়ে কি হবে? ঝামেলার ভয়ে অনেকে নীরবে টাকা দিয়ে চলে যান। কুলিরা বলে বন্দর কর্মকর্তারা তাদেরই লোক। ঘাট কর্তৃপক্ষ নাকি তাদের টাকা তোলার দায়িত্ব দিয়েছে। সেখানে আমরা কার কাছে অভিযোগ করবো বলেন?।

ইকোসিটি লিমিটেডের পরিচালক দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আওয়ামী যুবলীগ নেতা শিপু আহমেদ বলেন, সদরঘাটে আগে হয়রানি ছিল এখন তার ৯০ শতাংশ কমে গেছে। মোটামুটি হয় এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিশ্বাস করেন আর না করেন, জীবন দিয়ে চেষ্টা করি চাদাঁবাজি বন্ধ করতে। কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। যদি এমন কেউ ভোগান্তির শিকার হয়, তাহলে আমাদেরকে জানাতে বলবেন ‘

নতুনসময়/আল-এম