ঢাকা বুধবার, ৭ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২

মাদকদ্রব্য কর্মকর্তার ঘুষের আলাপচারিতার ফোন কল ফাঁসে তোলপাড়


১৫ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪৭

সংগৃহিত

অবৈধ আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক পরিদর্শকের বিরুদ্ধে। বার ম্যানেজার ও তার মধ্যে কথোপোকথন এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। কথোপোকথনের অডিও ফাঁসে অধিদপ্তরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

অডিওকলের রেকর্ডের ২ মিনিট ২ সেকেন্ডের কথোপকথনে শোনা যায়, এ প্রান্ত থেকে ফোন করেন নিউ স্টার বাফেট রেস্তোঁরার ম্যানেজার নুরুজ্জামান। ও প্রান্ত থেকে বলা হচ্ছে এই নূরুজ্জামান, বলেন। জবাবে নূরুজ্জামান বলেন, আসসালামালাইকুম স্যার, পরিদর্শক বলেন। স্যার আপনাকেতো প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা দেই, লাইসেন্স নবায়নের জন্য ২ লাখ টাকা, এছাড়া প্রতি পারমিটের অফিস খরচ বাবদ ২ হাজার টাকা করে দিই। পরিদর্শক এগুলো বাদ দেন, ফোনে এত কথা বলার দরকার কি? ম্যানেজার পারমিট প্রতিতো আপনাকে দিই। আর আপনি স্যার দয়া করেন, পরিদর্শককে এ সময় বলতে শোন যায় কোনডা? ম্যানেজার আপনার ইন্সপেক্শন, ৭০ হাজার টাকা করেতো দিই। বর্তমানে স্যার অফিসের অবস্থা অতটা ভাল না , আপনাদের হেল্প ছাড়া চলতো পারবো না স্যার। পরির্দশক জবাবে আবার বলেন না না কিছুই লাগবে না। স্যার, স্যার। পরিদর্শক বলেন, বুঝলেন যা বলার এসে বলবেন। ফোনে এত কথা বলার দরকার নেই, কি কাইছি বোঝঝেন। জনৈক নূরুজ¥ামান কেন কথা বলেন ন জানতে চান ওই পরিদর্শক। জবাবে ম্যানেজার বলেন উনি লাইনে নাই। আমি বলছি স্যার। পরিদর্শক বলেন, কথা না বলতে পারলে আপনে ওহি ডা পাইলেন কই? আপনি কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না, তাইলে আমনে ওইডা পাইলেন কেমনে। আমনে ওহি দেন কেমনে? ম্যানেজার-আমিতো জানি স্যার এর লাইগ্যা স্যার। পরিদর্শক এগুলো জানার দরকার নেই। আর আপনে এগুলা সব কথা ফোনে ফোনে কাহিনী করতেছেন। নূুরুজ্জামার এগুলো কিন্তু ভাল না। স্যার ফোনে ফোনে শেষ আর কন্টাক্টতো হচ্ছে, নূরুজ্জামান এগুলো কিন্তু ভাল না। স্যার আপনে হেল্প করেন আপনার হেল্প ছাড়াতো হবে না।

অপর কথোপকথনের অডিওতে বলতে শোন যায়, নূরুজ্জামান ফোন করলেই পরিদর্শক তা রিসিভ করে বলছেন, নুরুজ্জামান, স্যার স্যার। এই তুমি মোবাইলে এ কথা বলো কারণ কি? বলতো। তোমার উদ্দশ্য কি? স্যার একটু ই করেন, প্লিজ। না না তোমার সঙ্গে আর কথা বলবো না, স্যার। পরিদর্শক আবার বলেন, কথা বললে তুমি একটা জিনিসের পেছনে রেফরেন্স টানো, এটা টানো, ওই টানো কারণটা কি বলোতে নূরুজ্জামান।? ম্যানেজার কি করবো স্যার, পরিদর্শক আবার বলে ওইটার রেফারেন্স এইখানে কেন টানো,আউল-ফাইল কথা বার্তা বলো কেন বলো? স্যার আসলে বলো বলো, এগুলো কি তোমার বলা ঠিক? তোমাকে করতে বলেনি। তোমার যে কর্তৃপক্ষ তাকে জানাবা। সেইখানে বলবা তাই না? তুমি সেখানে ইতিহাস গাও ক্যান। আমাকে এটা বলো ইতিহাস গাওয়ার কোন যুক্তি আছে? স্যার ইতিহাস কি বলেন? প্লিজ স্যার। ম্যানেজার-স্যার আপনি যদি এত কঠিন হন তাহলে স্যার আমরা চলবো কিভাবে স্যার। জবাবে পরিদর্শক বলেন আমি কেমনে কঠিন হলাম। তোমরাইতো কঠিন করছে। আমি যদি কঠিন হয় তাহলে তোমরা কি ব্যবসা করতে পারবা?, দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। কঠিন হলে সব বন্ধ হয়ে যায় হুমকি দিয়ে বলেন পরিদর্শক। কঠিন তোমরা হও। কঠিনও হও তোমরা, আবার কথাও উল্টো বলো তোমরা। এর কারণডা কি? এডা আমাকে বোঝাওতো। আমি যদি কঠিন হই তোমরা কি আইন মতো চালাও বলোতো। কঠিন হইলে কি দোকন চলে? বলো, ম্যানেজার সে কারণেতো স্যার আপনাকে প্রতি মাসে দিয়ে আসছি। জবাবে পরিদর্শক আবার বলেন ইতিহাস টানো কেন। এই বলে তাদের দু’জনের কথোপোকথন শেষ হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই পরিদর্শকের নাম কবিরুল হাসান। তিনি পটুয়াখালির পরিদর্শক ( ক-সার্কেল) হিসেবে কর্মরত আছেন। তার ব্যবহৃত গ্রামীণ নম্বরে এই কথোপোকথন হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ ধরণের সুবিধা নিয়ে আসছেন। এখন তিনি মাসিক পেমেন্টসহ বিভিন্ন ধরণের আরও সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য ফোন করে ম্যানেজারকে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ খবর ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের অনেকের মুখে মুখে। তারা এ কারণে কোন কর্মকর্তা যদি অসৎ উদ্দশ্য কিংবা নিজের ফায়দা হাসিল করতে চান তাহলে দ্রুত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। না হলে ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

এ বিষয়ে সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে কবিরুল হাসানের মোবাইলে ফোন করলে তিনি বলেন, এখন আসামি ধরা নিয়ে ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলবো।