হলি আর্টিজানে হামলার ৮ বছর আজ
 
                                # ইতিহাসের জঘন্যতম এক নৃশংস জঙ্গি হামলা
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার আট বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজানে ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া জঙ্গিদের ছোঁড়া গুলি ও বোমায় পুলিশের অনেক সদস্য আহত হন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকে জঙ্গিদের চালানো অন্যতম বড় আঘাত বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই চালানো ওই হামলায় বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল।
ঘটনার দিন ৫ জঙ্গি আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি ও গ্রেনেড নিয়ে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে এবং সেখানে থাকা লোকজনকে জিম্মি করে। কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও স্পর্শকাতর বিবেচনায় হলি আর্টিজানে অভিযান থেকে বিরত থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পরদিন সকালে সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ জিম্মিদশার অবসান হয়। সেনা অভিযানে হামলাকারী ৫ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে নিহত জঙ্গিরা হলেন- রোহান ইমতিয়াজ, সামিউল মোবাশ্বির, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম।
এদিকে হলি আর্টিজানে হামলার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিবৃতি দেয়। এ ছাড়া হামলাকারী পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলেও দাবি করে জঙ্গি সংগঠনটি। তবে সরকার আইএসের এই দাবি নাকচ করে দিয়ে জানায়, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এই হামলার জন্য দায়ী।
প্রতিবছর ভয়াবহ এ দিনটি সামনে এলে হামলায় সরাসরি জড়িত নব্য জেএমবি ও দেশে সক্রিয় অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সর্বশেষ কার্যক্রমের প্রসঙ্গও আসে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে সক্রিয় জঙ্গিরা নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। দৃশ্যমান কোনো অপারেশনাল কার্যক্রম না থাকলেও গোপনে তারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে সদস্যদের রিক্রুট করছে আনসার আল ইসলাম, জেএমবি, নব্য জেএমবি, জামায়াতুল আনসার হিন্দ আল শারক্বিয়া ও হরকাতুল জিহাদ অব বাংলাদেশ (হুজিবি)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত তাদের বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই ভাবা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আত্মতুষ্টিতে থাকার সুযোগ নেই। এবার ঈদের ছুটিতেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় থাকছে আলাদা নজর।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিরা অনলাইন ও অফলাইনে সক্রিয় আছে। তবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরাও নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছি।
জঙ্গি তৎপরতার ওপর দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নজরদারিতে নিয়োজিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে উগ্রপন্থিরা। সংগঠনটির অনেক সদস্য অভিযানে নিহত হয়েছে। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়। এর পর অস্তিত্ব সংকটে পড়ে তারা।
হলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ৭ বছরেও মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ আদালত আলোচিত এই মামলার রায়ে ৭ জঙ্গিকে ফাঁসি এবং একজনকে খালাস দেন। এ ছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামি হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।
এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রায় ঘোষণার পর আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আপিল করে। আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ড সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।

 
                 
                                                    -2019-06-05-12-27-15.jpg) 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                        -2024-09-02-09-55-40.jpg) 
                                                         
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            