ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিদেশগামী শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারনা করছে চক্র


৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০০

প্রতিকি

# যারা বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রতারনা হয়েছেন তাদের মধ্যে যারা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে পুলিশ-বিপ্লব কুমার সরকার, যুগ্ম কমিশনার-ডিএমপি

দিনাজপুর সদরের আলতাফ হোসেন। পরিবারের অভাব অনটন দূর করার আশায় বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আসেন ঢাকায় পরিচিত নিকট আত্নীয় রেজোয়ানের বাসায়। এরপর রেজোয়ান ও আলতাফ মিলে ইরাক যাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিবারের জমি বিক্রি করে আর এস লিংকারস নামের ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মোশারফকে দেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। দ্রুত ভিসা দেয়ার আশ্বাস দেন মোশারফ। মোশারফের কথায় বিশ্বাস রেখে আলতাফ হোসেনও পরিবারের অভাব অনটন কাটানোর স্বপ্ন দেখেন। টাকা দেয়ার পর মাসের পর মাস পার হয়। মোশরফের কথায় আর আস্থা রাখতে পারেনা আলতাফ। সঙ্গে ফিকে হয়ে আসে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন।

সুচুতর মোশারফের কথা আস্থা না রেখে এবার টাকা ফেরত চায় আলতাফ ও রেদোয়ান। কিন্তু মোশারাফ আর টাকা ফেরত দেয়না। এভাবে কেটে যায় আরও ৬ মাস। সর্বশেষ টাকা ফেরত না পাওয়ায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি দায়ের করেছেন তিনি। এরপরও টাকা ফেরত পাওয়ার আশা ছাড়েনি তারা। এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত না পাওয়া আলতাফ ও রেদোয়ান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন টাকা উদ্ধারের।

সম্প্রতি ভুক্তভোগী এই দু’জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

ভুক্তভোগী আলতাফ জানান, “অনেক আশা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছায় ঢাকা এসে আমি টাকাগুলো দিয়েছি। কিন্তু আজ আমার কেন এমন হলো।”
তিনি বলেন, আমরা মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করে টাকাগুলো দিয়েছি। কিন্তু সে এমন প্রতারনা করতে পারলো।

কথাগুলো বলতে বলতে কান্না চলে আসে আলতাফের। আলতাফ জানায়, অনেক কষ্ট করে জমি বিক্রি করে একসঙ্গে সকল টাকা আমি পরিশোধ করেছি। কিন্তু আজ আমার কি হলো, আমি দুই কূল-ই হারিয়েছি। আমার পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

শুধু আলতাফ নয় রাজধানীতে এই ধরনের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতারকরা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল লোকজনের সঙ্গে প্রতারনা করে আসছে। সর্বস্ব বিক্রি করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিদেশগামী ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতারনা করছে। আর এদের খপ্পরে পড়ে পথে বসছে তারা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট এ ধরনের প্রতারনার শিকারের কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও দিন দিন এটি বেড়ে চলেছে। নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বিদেশগামী শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারনা করে যাচ্ছে একটি চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা, কাকরাইল ও পল্টন এলাকায় এ ধরনের অন্তত অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিদেশগামী লোকজনের সঙ্গে প্রতারনা করে আসছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষরা রাজধানীতে এসে এই সকল প্রতারকদের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পারায় বহাল তবিয়তে থাকছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা এলাকায় আর এস লিংক নামের প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিদেশগামী লোকজনের সঙ্গে প্রতারনা করে কয়েক কোটি টাকা আত্নসাৎ করে মোশরাফ। বর্তমানে আত্নগোপনে রয়েছে সে। প্রতিদিন লোকজন এই মোশরাফের খোঁজ করার জন্য উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে তার অফিসে আসতো। আর এ কারণে কিছু ভাড়াটে সন্ত্রাসী ঠিক করে তার অফিস উঠিয়ে নিয়ে যায়।

ঠিক একই রকম প্রতিষ্ঠান দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেএস ট্রাভেলস এ্যান্ড টুরস, ইষ্টার্ণ বিজনেস লিমিটেড নামের আরও দুটি প্রতিষ্ঠান। ইষ্টার্ণ নামের এই প্রতিষ্ঠানের মালিক ওয়ালিউল্লাহ মালেয়শিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুর পাঠানোর নাম করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে সে আর দেশে থাকেনা। স্ত্রী, পুত্র কন্যা নিয়ে সপরিবারের মালেয়শিয়া রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দিন দিন এ ধরনের প্রতারনা বাড়ার ফলে বিষয়টি নিয়ে পুলিশও সক্রিয় উঠেছে। ইতিমধ্যে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ ধরনের ভূয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরীর কাজ শুরু করেছে। নাম সর্বস্ব ও অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়ে থানায় জিডি দায়ের করেছেন সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন বলেন, যারা বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রতারনা হয়েছেন তাদের মধ্যে যারা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে নানা তথ্য নিয়ে প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রতারনা করা কয়েকজন প্রতারককে গ্রেফতার সম্ভব বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কে এন রায় নিয়তি বলেন, এ ব্যাপারে সরকার গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে। যেন কেউ বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রতারনার শিকার না হন সে ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের সচেতনমূলক কাজ করে আসছে সরকার। এরপরও কেউ যদি কোন দালালের মাধ্যমে ভূয়া প্রতিষ্ঠানে এসে প্রতারনার শিকার হন সেটি অনাকাঙ্খিত। তারপরও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করে থাকেন।

তিনি বলেন, যে সকল ভূয়া প্রতিষ্ঠানের দ্বারা লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থানায় মামলা করেছেন সেগুলো নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। ওই সকল প্রতিষ্ঠানের মালিকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।