ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১

জালিয়াতির নিয়োগে আনোয়ারের হাতে ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’


২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:১১

সংগৃহিত

জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগে দীর্ঘ ১৯ বছর পশ্চিম রেলওয়ে চাকুরি করছেন খন্দকার আনোয়ার হোসেন নামের এক কর্মচারী। ২০০৪ সালের তার নিয়োগ দেয় পশ্চিম রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অথচ ওই সময়ে চাকরির কোন বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশ করা হয়নি। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া খন্দকার আনোয়ার এখন প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে কর্মরত। গত ১৮ বছরে আনোয়ারের হাতে যেন উঠেছে আলাউদ্দিনের চেরাগ। এমএলএসএস আনোয়ার এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। পশ্চিম রেলওয়ের নানা অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করতে গিয়ে এক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

পশ্চিম রেলের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, তৎকালীন সময়ে কিভাবে নিয়োগ হয়েছে আমি জানিনা। সে আমারে দপ্তরে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি থাকলে যথাযথভাবে তদন্ত হবে। তদন্তে দোষী হলে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

সূত্রে জানা গেছে ২০০৪ সালে এমএলএসএস পদের কোনো নিয়োগ সার্কুলার প্রকাশিত না হলেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাৎকালিন সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার শেখ কামাল খন্দকার আনোয়ার হোসেনকে চাকুরি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, খন্দকার আনোয়ার হোসেন এমএলএসএস পদের জন্য রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৭-৯-২০০৪ তারিখে ৫০ টাকার বিনিময়ে আবেদন ফরম ক্রয় করেন। আবেদন জমা দেন ৯-৯-২০০৪ তারিখে। আবেদন পত্র জমা দেয়ার দুইদিন পরে অর্থাৎ ১১-৯-২০০৪ তারিখে ব্যাংক ড্রাফট ১০-৯-২০০৪ তারিখে স্বাক্ষরিত চারিত্রিক সনদ ও ১২-৯-২০০৪ তারিখের স্বাক্ষরিত নাগরিক সনদপত্র জমা দিয়েছেন বা আবেদনের পরে উল্লেখিত সনদগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।

রেলওয়ে পশ্চিমের চীফ পার্সোনাল আফিস দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পরের তারিখের কোন কাগজ পত্র আবেদনপত্রে সংযুক্তি সম্ভব নয়। যদি তা হয়ে থাকে তা এক কথায় জালিয়াতি।

খন্দকার আনোয়ার হোসেনের অফার লেটারে (নিয়োগ পত্র) দেখা যায় আবেদনের মাত্র মাত্র ৩ মাসের মধ্যে তিনি নিয়োগ পান। এখানেও জালিয়াতির বিষয়টি আরো স্পষ্ট।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেন, রেলের নিয়োগের আবেদন পত্র জমা দানের পরে ৬৪ জেলার আবেদন আলাদা করা হয়। এরপর চলে আবেদনপত্র ও সংযুক্তি কাগজপত্র যাচাই বাছাই। আবেদন এন্ট্রি, নির্বাচন পরিক্ষার কার্ড ইস্যু, কার্ড প্রদান ও ফলাফল প্রকাশ। উত্তীর্ণদের ডাক্তারি পরিক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন এর পরে চুড়ান্ত নিয়োগ। এই ধাপ গুলো পার হতে তৎকালীন সময়েই ৮ থেকে ১২ মাসের অধিক সময় লাগলেও খন্দকার আনোয়ার হোসেন মাত্র ৩ মাসেই নিয়োগ পান। ৯-৯-২০০৪ তারিখে আবেদন করেন, নিয়োগপত্র পান ১৯-১২-২০০৪ তারিখে। আর যোগদান করেন ১০-১-২০০৫ তারিখ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০০৪ সালে এমএলএসের কোনো সার্কুলারই হয়নি। খন্দকার আনোয়ার হোসেনের নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ সবই জালিয়াতি, নিয়োগও জালিয়াতি।

এদিকে খন্দকার আনোয়ার হোসেন বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে কর্মরত। আর এর সুবাদে যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ তার হাতে। ওই দপ্তরের সব কাজই তিনি নিয়ন্ত্রন করেন। কমিশন ছাড়া কোনো ফাইল নড়েনা। রেলওয়ে বিভিন্ন টেন্ডারে তার গোপন হাত রয়েছে। আর তার এই হাতেই একজন সামান্য এমএলএসএস থেকেও কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন আনোয়ার। আর এ টাকাতেই করেছেন বাড়ি। এছাড়াও গাড়িসহ রয়েছে বিপুল অর্থসম্পদ।

জানা যায়, প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হকও যেখানেই যান তার সঙ্গী ছায়া হিসেবে থাকেন আনোয়ার। অনেকেই তাকে আবার বড় বাবু নামেও ডাকে।

এ বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারের হোসেনের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই তার নিয়োগ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিপুল সম্পদের অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।