ঢাকা মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১

‘নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই রেললাইনে বিএনপির নাশকতা’


১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০৯

ছবি সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে রেললাইন কেটে নাশকতার ঘটনায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ (৫০) সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বাকি গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নেত্রকোণার মদন থানার বারই বাজার এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে জান্নাতুল ইসলাম (২৩), ময়মনসিংহের ভালুকা থানার বান্দীয়া এলাকার তাইজুদ্দীনের ছেলে মেহেদী হাসান (২৫), গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার ভানোয়া এলাকার তারিকুল ইসলাম দিপুর ছেলে জুলকার নাইন আশরাফি ওরফে হৃদয় (৩৫), উত্তর ছায়াবিধি এলাকার মৃত সোলায়মান মোড়লের ছেলে শাহানুর আলম (৫৩), কানাইয়া পূর্বপাড়া এলাকার মৃত ওমেদ আলী মোল্লার ছেলে মো. সাইদুল ইসলাম (৩২) ও মধ্য ছায়াবিধি এলাকার আফতাফ উদ্দিনের ছেলে সোহেল রানা (৩৮)।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম।

পুলিশ কমিশনার বলেন, একটি নাশকতার মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি যে, একদল দুষ্কৃতকারী গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর আনুমানিক ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে বনখড়িয়া এলাকায় চিলাই রেল ব্রিজের পাশে রেললাইন কেটে ফেলে। এর ফলে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে আসলাম নামে একজন নিহত হন এবং ১০-১২ জন আহত হন।

ঘটনার পরপরই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে গতকাল (শনিবার) দুষ্কৃতকারী দলের সদস্য জান্নাতুল ইসলামকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জান্নাতুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ট্রেনে নাশকতার ঘটানোর উদ্দেশ্যে তারা কোনাবাড়ী থেকে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একটি হায়েস গাড়ি (মাইক্রোবাস) ঢাকা যাওয়ার কথা বলে ভাড়া করে। তারা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে ঢাকা যাওয়ার কথা থাকলেও ঢাকায় না গিয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতে থাকে। এ সময় মাইক্রোবাসে থাকা সবাই মুখোশ পরা ছিল। এ অবস্থায় ড্রাইভার ভয় পেয়ে তাদের ঢাকায় না যাওয়ার এবং মুখোশ পরার কারণ জিজ্ঞেস করলে তাদের মধ্যে একজন মুখোশ খুলে। এ সময় তাদের চেনে কি না জানতে চাইলে ড্রাইভার চিনতে পারলেও কিছু বলতে সাহস পায়নি। পরে তারা ভাড়া করা মাইক্রোবাস নিয়ে রেললাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে বের হয়।

পথিমধ্যে তারা গাজীপুর শহরের শিববাড়ীর জোড় পুকুরপাড় এলাকারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গাড়িতে উঠায়। পরে তারা গাজীপুর শহরের জোড় পুকুরপাড়স্থ ইবনে সিনহা তোহার বাড়ি থেকে রেললাইন কাটার যন্ত্রপাতি, দক্ষিণ সালনা উসমান গণির ভাড়া দেওয়া ‘বাঁশ বাগান’ রেস্টুরেন্ট থেকে দুইটি গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে উঠায়। তারা এসব সরঞ্জাম নিয়ে শিববাড়ী মোড় থেকে দুইজন ব্যক্তিকে গাড়িতে উঠায়। এরপর গাজীপুর শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঘোরাঘুরি করে রাত ১০টায় শিমুলতলী এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খায়। রাতের খাবার শেষে ১১টায় হোটেল থেকে বের হয়ে ফের গাড়িতে সময় ক্ষেপণের জন্য শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঘোরাঘুরি করে। রাত দেড়টার দিকে বনখড়িয়া এলাকায় ৪-৫ কিলোমিটার দূরের বনের পাশে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে তারা গ্যাস সিলিন্ডারসহ সরঞ্জামাদি নিয়ে বনখড়িয়া চিনাই রেল ব্রিজের পাশে যায়। সেখানে গিয়ে তারা সুযোগ বুঝে ৩-৪টার মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের ২০ ফুট রেললাইন গ্যাস কাটার দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এর কিছু সময় পর ওই রেল সড়কে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ভোর ৪টা ১৫মিনিটের দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ঘটনা ঘটিয়ে তারা (দুষ্কৃতকারীরা) গাড়ি নিয়ে ঢাকা চলে যায়। ঢাকা গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে চারজন গাড়ি থেকে নেমে যায় এবং বাকি সদস্যরা পরে মিরপুরে নামে। মিরপুরে নেমে তারা নিজেদের কাছে টাকা না থাকায় ফোনে অন্য একজনকে ড্রাইভারের নম্বরে টাকা পাঠাতে বলে। সেই মোতাবেক জনৈক ব্যক্তি ড্রাইভার সাইফুলের বিকাশে ৮ হাজার ১০০ টাকা পাঠায়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি (উত্তর) বিভাগের একাধিক টিম গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ট্রেনে নাশকতায় জড়িত জান্নাতুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসানকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাসান আজমল ভূঁইয়া। পরে হাসান আজমল ভূঁইয়া, জুলকার নাইন আশরাফি ওরফে হৃদয়, শাহানুর আলম, মো. সাইদুল ইসলাম, সোহেল রানাদেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নাশকতার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নকারীরা সবাই বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী।

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দলের উচ্চ পর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে। বড় কোনো ঘটনা ঘটলে দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। সরকারের বর্তমান নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে বিরাজমান রাষ্ট্রীয় সুশৃঙ্খল পরিবেশকে নষ্ট করা, জনমনে ভীতি সঞ্চার করা এবং এর মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজ, হরতাল-অবরোধ সফল করার জন্য ব্যাপক প্রাণহানির জন্য রেললাইনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। মাইক্রোবাসের চালক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী দিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. শফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর পিবিআই পুলিশ সুপার মাকছুদের রহমান, গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইব্রাহিম খান, আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান প্রমুখ।