ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

অনিয়ম দূর্ণীতি ও সিন্ডিকেটে জিম্মি রাকাব


৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৫

প্রতিকি

অনিয়ম দূর্ণীতি ও সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সীমাহিন দূর্ণীতি, দূর্ণীতির প্রমান হওয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের পদোন্নতি দেওয়াতে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ব্যাংকটি। এ নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

বিশেষায়িত এ ব্যাংকের দিনাজপুর সদর শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও জহুরুল আলমের বিরুদ্ধে ভূয়া কৃষক সাজিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্নসাতের বিষয়ে তদন্তে প্রমান হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহন করা হয়নি। এছাড়াও রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়ের একটি সিন্ডিকেট নানা অনিয়ম করেও বছরের পর বছর ধরে প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করে গেলেও তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।  

গত বছর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) দিনাজপুর সদরের একটি শাখায় ভুয়া কৃষক সাজিয়ে এবং এনআইডি কার্ড ও ছবি জালিয়াতির ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। জেলার পুলহাট এলাকার মাঝিপাড়া শাখায় ১৩ জনের নামে ভুয়া হিসাব খুলে প্রায় এক কোটি টাকা লোপাট করাহয়।
বগুড়া নিবাসী কাওসার আলী নামে এক ব্যক্তির জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন, ঐ ব্যক্তি মাঝিপাড়া শাখায় ব্যাংক হিসাব খুলতে গেলে সেখানে তার আইডি দিয়ে হিসাব খোলা আছে । অথচ ওই শাখায় তিনি কোনো হিসাব খোলেননি বলে দাবি করেন। অভিযোগপত্রে তিনি মোট ১৩ জন ব্যক্তির তালিকা সংযুক্ত করেন। যাদের সবার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার ও জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) অফিসের তালিকাভুক্ত কৃষক দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন। পরে এ বিষয়ে একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা ওই শাখার ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান, শনাক্তকারী কর্মকর্তা জহুরুল আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন রাকাবের রংপুরের জিএম বাবর আলী জানান, বিষয়টি তদন্তা করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বাকিটা উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখবেন।
পরে এ প্রতিবেদনের পরও মোস্তাফিজুর রহমানকে মাঝিপাড়া শাখা থেকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের রাজশাহীস্থ প্রধান কার্যালয়ে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে ঋন ও অগ্রীম বিভাগ ০১ এ গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বে দিয়ে বদলি করে আনা হয়। একজন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে এ রকম একটি পদে বদলি করে এনে দ্বায়িত্ব দেয়ার ঘটনাতেও কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা রাকাবের প্রধান কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত। এরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নির্দেশনাই মানেন না। এর মধ্যে এজিএম ভিকারুল ইসলাম, চেয়ারম্যানের পিএস মুকুল বর্ধন, প্রায় এক যুগ ধরে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছেন, মো: সাদিকুল ইসলাম ডাবলু রয়েছেন প্রায় ৫ বছর, মো:আব্দুল হাকিম দেওয়ানও প্রায় ৭ বছর ধরে একই কর্মস্থলে কর্মরত।
এরাই মোস্তাফিজের দূর্নীতির অভিযোগ থেকে তাকে রক্ষা করতে নানা কুটচাল অব্যাহত রেখেছেনএবং যে কোন মূল্যে তাকে রক্ষা করতে সবরকম চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

শুধু তাই নয়,রাকাব এ তিন জন সিনিয়র জিএম থাকা সত্ত্বেও এক জন কনিষ্ঠ ডিজিএম জনাব শওকত শহিদুল ইসলাম কে নিয়ম না মেনে মহা ব্যবস্থাপক প্রসাশন চলতি দ্বায়িত্বে দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী চলতি দায়িত্ব দেওয়া হলে ছয় মাসের বেশি সময় থাকতে পারবেন না। যদি থাকতেই হয় তবে সময় বাড়িয়ে নেয়ার জন্য মন্ত্রনালয় কতৃক অনুমোদন নিতে হবে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কর্মকর্তা ছয় মাসের অধিক সময় হলেও মন্ত্রনালয় থেকে অতিরিক্ত সময় বাড়ানোর অনুমোদন নেওয়া হয়নি এমনকি কর্তৃপক্ষ তাকে সরিয়েও দেননি।  এমনকি নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালককের নিকট একজন উপমহাব্যবস্থাপকের জানানোর কথা থাকলেও তাদের সহায়তার জন্য তিনি জানানি।

অভিযুক্ত সেই মোস্তাফিজুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, যা বলার কর্তৃপক্ষ বলবে।

সার্বিক বিষয়ে বিষয়ে রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরন্জন কুমার দেবনাথ বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টির সর্বশেষ আপডেট আমি জানিনা। এটা জেনে জানাতে হবে।