ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

আ. লীগ নেতার মামলা তুলে না নেওয়ায় ভুক্তভোগি নারীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা


২২ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৪৬

সংগৃহিত

মামলা প্রত্যাহার না করায় উল্টো বাদির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে দারুসসালাম থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ নেতাকে রক্ষা করতে প্রায় সাত ঘন্টা থানায় বসিয়ে রেখে মনগড়া মামলা দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী উম্মে সালমা চৌধুরী রানুর মা আলেয়া বেগম অভিযোগ করেন, থানা আওয়ামী লীগের নেতা গিয়াসউদ্দিন তাদের বাড়িঘর দখলের জন্য সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করে। এ ঘটনায় সালমা আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলাটি বর্তমানে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। মামলার পর থেকেই গিয়াসউদ্দিন তার সহযোগীদের দিয়ে নানা হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এ ঘটনায় থানায় জিডিও হয়।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার সালমা তার বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করে। এ অবস্থায় গিয়াস তার লোকজন নিয়ে আবারো হামলা শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে সালমা দুপুর আড়াইটায় ৯৯৯ এ ফোন দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। বিকেল ৪ টার দিকে আবারো থানা পুলিশ এসে সালমা ও তার স্বামী সোহেলকে ওসির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়ে চলে যায়। বিকেলে থানায় যাওয়ার পর সালমার মোবাইল আটকে রাখে পুলিশ। সন্ধ্যার পর ওসি থানায় এসে সালমাকে গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়র করা মামলা তুলে নিতে বলেন। রাত ১১ টা পর্যন্ত তাকে নানা হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দিতে থাকেন। তবে মামলা প্রত্যাহারের পর গিয়াসউদ্দিনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার হামলা বা বসতবাড়ি দখল করবে না এমন অঙ্গিকার চাইলে তাতে ওসি রাজি হননি। তখন ওসি হুমকি দিয়ে বলেন, কে তোকে বাঁচায় দেখে নিচ্ছি বলে মামলা দেয়ার নির্দেশ দেন। ওসির নির্দেশের পর এসআই রেজাউল করিম বাদি হয়ে সালমার বিরুদ্ধে একটি সাজানো মামলা দায়ের করেন।
তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘উম্মে সালমা রানু হরিরামপুর বাসার সামনে গিয়াস উদ্দিন নামে লটকানো সাইনবোর্ড অপসারন করে। উক্ত লটকানো সাইনবোর্ড অপসারন করাকে কেন্দ্র করে গিয়াস উদ্দিনের ম্যানেজার ফরহাদ হোসেন সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করাসহ উত্তেজিত হইয়া মারমুখী আচারন করে এবং ধারালো হাসুয়া নিয়ে খুন-জখমসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। উক্ত আসামীকে তাৎক্ষনিক গ্রেপ্তার ব্যতীত খুন-জখমসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা অথবা যে কোন প্রকার ধর্তব্য অপরাধ সহ প্রাণ নাশের সম্ভাবনা কোনভাইে নিবৃত করা সম্ভব হচ্ছিল না। যার কারনে উপরোক্ত যে কোন প্রকার ধর্তব্য অপরাধ সহ প্রাণ নাশের সম্ভাবনা নিবারন কল্পে আমি সঙ্গীয় এএসআই (নিঃ)/ মোঃ মাসুদ হোসেন, কং/১৪৩৬৪ রফিকুল ইসলাম, কং/১৫২৪২ আসিফ ইকবাল, নারী কর/২৭০০৩ মোছাঃ শাপলা খাতুনদের সহযোগিতায় তাৎক্ষনিক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনাসহ ধর্তব্য অপরাধ প্রতিরোধ কল্পে তাহাকে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার করি’।
অপরদিকে খোদ থানার অন্যান্য কর্মকর্তা এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দেখা করার নামে ওসি সাহেব যেটা করেছেন তা নজিরবিহীন। বাদিকে ডেকে এনে এভাবে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো আইনের পরিপন্থী। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকে বাঁচাতে যেটা করা হয়েছে তাতে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাবে।
এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় আইনের কোনো পরিপন্থী হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, বিস্তারিত জানতে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন ওসি।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এই মামলায় আইনের ব্যাত্যয় ঘটলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ওই নারী তার লোকজন নিয়ে আমার লোকজনের উপর হামলা করেছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর বেশিকছি আমি জানিনা।