ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদের তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ


১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২৬

সংগৃহিত

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ মসজিদ কমিটিকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছে। থানা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি কমিটি ঘোষণা করলেও তা মানছেন না মসজিদের মতোয়াল্লী ও সেক্রেটারিসহ অন্য মুসল্লিরা। তারা বলছেন- একাধিক মামলার আসামী ও অসৎ ব্যক্তিকে সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর আ.লীগ সেক্রেটারি বলছেন, দুই পক্ষের মতামত নিয়েই কমিটি করেছেন। তবে স্থানীয় কমিশনার জানিয়েছেন, দ্বন্দের নেপথ্যে আয়-ব্যয়ের হিসেব। সমাধানে আসতে এবং হিসাবে গড়মিল আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আজ (শুক্রবার) দুই পক্ষের একত্রে বসার কথা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নিমাই কাশারী বাজার বাইতুস শরিফ জামে মসজিদের মতোয়াল্লী হাজী মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা বাবা মসজিদের জন্য জমি দিয়েছেন। তিনি ২০ বছর আগে মারা গেছেন। এরপর মুসল্লিরা মোহাম্মদ আলীকে মসজিদের মতোয়াল্লী দায়িত্বে বসান। নিয়ম অনুযায়ী মতোয়াল্লীই হবেন মমজিদের নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি আয়-ব্যয়ের তদারকি এবং কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে মসজিদ উন্নয়নে তা ব্যয় করবেন। কাগজে দায়িত্বে থাকলেও বাস্তবে কোনো কাজেই তাকে রাখেনা। তার মতামতেরও কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়না। একটি চক্র টাকা আত্মসাৎ করেই চলেছে।

কি পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে জানতে চাইলে বলেন, গত ১৮ বছরের যদি হিসেব করি তাহলে চক্রটি তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমি ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবাদ করে আসছি। ২০১৬ সালে থানা আ.লীগের সেক্রেটারি এসে তিন বছর মেয়াদী একটি কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার কোনো ইখতিয়ার তার নেই। মতোয়াল্লী হিসেবে আমারও কথা থাকতে পারে। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেননি। তাই ওই কমিটির কাগজে স্বাক্ষর করিনি। আজ পর্যন্ত আমাকে ওই কমিটি কোনো হিসাব দেয়নি।
মতোয়াল্লী হিসেবে আমি ওই অবৈধ কমিটি বিলুপ্ত করে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর সাত সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করি। কোষাধক্ষ্য জাহাঙ্গীর আলম আগের কমিটিতেও ছিলেন। অন্য সদস্যরা হলেন-সুন্দর আলী, শহীদুল আলম, ডাডা. আব্দুল মান্নান, সাইফুল ইসলাম ও আব্দুল আজিজ।

গত একমাস ধরে এলাকার অনেক মানুষ সিদ্দিরগঞ্জ থানা আ.লীগ সেক্রেটারি হাজী ইয়াসিন মিয়ার বাসায় গেছেন। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। সেক্রেটারি সম্পর্কে আমার মামা হন। আমি, আমার মা এবং আমার ছোট ভাই তার বাসায় গিয়ে সব বিষয় তাকে খুলে বলেছি। তিনি তাদের বাড়িতে আসবেন বলে জানান। কিন্তু হঠাৎ তিনি বলেন, আগের কমিটির সভাপতি শাহাবুদ্দিন মিয়াকে আবার সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা দেন। শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজী ও ভূমিদস্যুর মামলা আছে। তাই উনার কথা আমরা মানি নি। আমাদের সমাজ আছে। মুসল্লিরা আছেন। আমরা প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাবো। মোহাম্মদ আলী আরো বলেন, আমি প্রয়োজনে আরো দুই শতক জায়গা মসজিদের জন্য দেবো। আমি চাই মসজিদটা সুন্দর ভাবে চলুক, দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, থানা আ.লীগ সেক্রেটারি হাজী ইয়াসিন মিয়া জানান, মসজিদের মতোয়াল্লী, তার মা, ভাই কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্যরা একমত পোষণ করায় তিনি কমিটি ঘোষণা করেন। সভাপতির নামে মামলা প্রসঙ্গে বলেন- মামলা তো আমার-আপনার বিরুদ্ধে থাকতে পারে। ওই লোক কালপ্রিট কিনা, বেনামাজী কিনা অসামাজিক কিনা- এগুলো দেখতে হবে, তাহলেও তাকে মসজিদ কমিটিতে বেমানান বলা যায়। লোকটা নামাজ পড়েন, লোকজনও ভালো বলছে। তারপরও যদি কেউ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে অন্য দিকে প্রভাবিত করতে চায় আমাদের কি করনীয় আছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার শাহজালাল বাদল বলেন, এর আগেও আমাদের সেক্রেটারি সাহেব মসজিদ কমিটি করে দিয়ে গেছিলেন। এবারও তিনি দায়িত্ব নিয়ে এলাকার ১০ জনের সঙ্গে বসে একটা কমিটি করে দিয়েছেন। আমি এতোটুকুই জানি। গত শুক্রবার সবার বসার কথা ছিল। সেখানে থানা আ.লীগ সেক্রেটারি হাজী ইয়াসিন মিয়ারও আসার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। তাই পরদিন শনিবার এসে কমিটি করে দিয়ে গেছেন।

কাউন্সিলর বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে মসজিদের হিসেবে নিয়ে। গত সোমবার দুই পক্ষই আমার অফিসে আসছিলেন। আজ দুই গ্রুপকে নিয়ে একসঙ্গে বসে মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখে এ ঝামেলা শেষ করবে। একটা অডিট টিম করছি। সবার জানা দরকার মসজিদটা কোনদিকে চলছে।

উল্লেখ্য, গত কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর ২২ লাখ টাকায় ১৮ টি এসি কেনা দিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালে কমিটি হলেও ১৮ সালে দায়িত্ব বুঝে নেন কোষাধক্ষ্য মো.জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, রাগ করে দুই বছর দায়িত্ব নেননি। সেসময়ের কথা তিনি বলতে পারবেন না।

সভাপতি শাহাবুদ্দিন মিয়াকে ফোন করে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের ওয়ার্ড কউন্সিলরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি একটি অডিট টিম করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর একটু পরেই টিএন্ডটি নাম্বার থেকে একজন ফোন করে নিজেকে একটি পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় দিয়ে এ প্রতিবেদকে বলেন, আপনি শাহবুদ্দিনকে কি বলেছেন, তিনি আমার ভাই।