ঢাকা বুধবার, ১লা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মানেই এসআই হাসান !


৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২৩

সংগৃহিত

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মানেই যেন এসআই হাসান। অথচ ডিবিতে উর্ধতন ১ জন উপ-পুলিশ কমিশনার, ১ জন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, ১ জন সহকারী পুলিশ কমিশনার এবং ২ জন পরির্দশক থাকলেও হাসান-ই যেন সর্বেসবা। প্রায় আড়াই হাজার বর্গকিলোমিটারের রাজশাহী শহরের চারপাশেই বিশেষ করে মাদকস্পট থেকে শুরু করে এমনও কোন স্থান নেই যেখানে হাসানের পদার্পন নেই। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলতেই সবাই এখন হাসানকেই চেনে। বেপরোয়া হাসানের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ডিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিবাদ করলে তাদেরও নাজেহাল করতে ছাড়েননি তিনি।এমনকি ডিসি পর্যন্ত হাসানের ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না।

তার বিরুদ্ধে নিরিহ লোকজনকে ডিবিতে তুলে এনে ব্যাপক নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও ভূয়া মামলা দেয়ার শতশত অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহীর কোন এক নেতার আর্শিবাদে তিনি এতটাই বেপরোয়া যে কাউকে মানেন না।  ডিবিতে যোগদানের মাত্র ৪ বছরেই সে যে এতটা বেপরোয়া যে সেখানে চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই নেই।ডিবির এই অবস্থা একেবারে প্রকাশ্য।

এদিকে হাসানের নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা বিচারের আশায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপি কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যারা সিরিয়াল নম্বর ১১৬০।  

জানা যায়, ২০১৩ সালে এসআই নিয়োগে রাজশাহী জেলা কোটায় সুযোগ পান তিনি। পরে তদন্তে পৈত্রিক বাড়ি রাজবাড়ী হওয়াতে সমস্যা হলেও পরবর্তীতে কিছু নেতার সুপারিশে টিকে যান তিনি। ১ বছর ট্রেনিং শেষে ২০১৪ সালে রাজশাহী মহানগর পুলিশে মতিহার থানায় প্রভিশন পিরিয়ড শেষ করেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে ১৮ ডিসেম্বর কনফার্ম হন। এরপর ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে যোগদান করেন। বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি এখানেই রয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এক সময় সিডি ৮০ মোটরসাইকেল নিয়ে থানায় যাওয়া হাসান ডিবিতে যোগদানের কয়েক বছরে চাঁদাবাজি করে যা আয় করেছেন তা অকল্পনীয়। নিরিহ লোকজনকে ডিবিতে তুলে এনে বর্বর মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালিয়ে সে এ সম্পদ গড়ে তোলেছে।

তার এমন উথ্যানে স্থানীয় লোকজনসহ অনেক পুলিশ কর্র্মকতারই ভ্রুকুঁচকে যায়। একই সাথে তার টিমের দুই কনেস্টবল সাজরুল ও শুভঙ্কর কামিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। যা পুরো আরএমপির কর্মকর্তাদের মাঝে আলোচিত।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, টেকনাফ থানার ওসি প্রদিপ কুমার তার অপকর্মের কারণে দেশজুড়েই আলোচিত। তার সাথে এসআই হাসানের তুলনা করলেও কোন অংশে ভুল হবেনা।

রাজশাহীতে এসআই মাহবুব হাসানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে এমন চাঞ্ল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে উধ্যত আচরণ : ডিবিতে যোগদানের পরই এসআই মাহবুব যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। হয়ে উঠেন বেপরোয়া। তার মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে যায় ডিবিতে কর্মরত তৎকালীন পরিদর্শক (ওসি) সিরাজুম মনির প্রতিবাদ শুরু করেন। আর এ নিয়ে তার সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ শুরু হয়। এটি নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে তার সঙ্গে এক প্রকার হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে ।পরে ওসি সিরাজুম মনির গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেন। পরে অভিযোগের কোন সুরাহা না পেয়ে তিনি নিরবে সেখান থেকে বদলি নিয়ে চলে আসেন। বর্তমানে তিনি চন্দ্রিমা থানার ওসি। একই ঘটনা ঘটে এসআই মনিরের সঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে, এসআই হাসান মনিরকে প্রভাব খাটিয়ে চট্রগ্রাম রেঞ্জে বদলি করে দেন।

ওসি সিরাজুম মনির বলেন, একজন জুনিয়র এসআই যখন উধ্যত আচরণ করেন আর সেই আচরণের বিচার না পাওয়া যায় তখন আর বলার কিছুই থাকেনা। তিনি বলেন, চাকরির বয়স কতইবা হলো এর মধ্যে এত সম্পদ, নিরিহ লোকজনকে যেভাবে হয়রানী ও টাকা পয়সার লেনদেন, এতে করে নিজেদের মানসম্মান আর থাকেনা। এরপর থেকে ডিবিতে হাসানের বিরুদ্ধে মূলত কেউ আর কথা বলার সাহস পাইনা। এমন অভিযোগ রয়েছে, যেখানে ইন্সপেক্টররা বসার রুম পান না সেখানে হাসান নিজের জন্য বিলাসবহুল রুম তৈরী করেছিলেনে, করেছিলেন নির্যাতনের জন্য টর্চার সেলও। তবে বর্তমানে তার সেই রুম নেই। কিছুদিন আগে কমিশনারের হস্তক্ষেপে দুই ইন্সপেক্টরের জন্য পৃথক রুম বরাদ্দ হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের রোহমর্ষক বর্ণনা

পা হারিয়ে পঙ্গু জার্মান : অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর দক্ষিণ পূর্ব সীমান্ত ঘেষা এলাকা খরবোনা। এই এলাকার বাসিন্দা জার্মান। তিনি মূলত মিডল চরে জমিজমা চাষাবাদ করে থাকেন। মিডলচর এলাকায় একবার গোয়েন্দা পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর আলো নামের একজনকে পুলিশ ক্রসফায়ার দেয়। এরপরই মূলত এসআই হাসান ঘটনাকে পুঁজি করে বাণিজ্য শুরু করে। জার্মানের বাসা খরবোনা এলাকা হলেও ওই ঘটনায় আরিফ নামের আরেকজনসহ জার্মানকে আটক করে হাসান। এরপর ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো শুরু করে। দু’দিন পর আরিফ ১০ লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়। আর জার্মানকে পায়ে গুলি করে বন্দুকযুদ্ধের সাজানো গল্প তৈরী করে। বর্তমানে জার্মান এক পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছেন।

জার্মান বলেন, একবেবারেই বিনা অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে এসআই হাসান। অনেক আকুতি মিনতি করেও কোন কথাই শুনেনি সে। পায়ে গুলি করার আগে তিন পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

জার্মান অভিযোগ করেন, মিডল চরে পুলিশের উপর হামলার ঘটনার দিন তিনি ছিলেন না। তার সাথে আটক করা আরিফ ছিলো। আরিফ১০ লাখ টাকা দেয়াতে সে ছাড়া পায়। অথচ আমাকে নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করে।

তার অভিযোগ, পুলিশ ঠিকমত পায়ের চিকিৎসাই করাতে দেয়নি। যার কারণে পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি বলেন, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বলতে তিনিই।এখন পঙ্গু অবস্থায় তার পরিবার নি:স্ব হয়ে পড়েছে। তিনি এসআই হাসানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

জার্মান সম্পর্কে ২৪নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান উদ্দিন বলেন, ঈর্শ্বান্বিত হয়ে এসআই হাসান এ কাজ করেছে।

সোর্স মিলে গণধর্ষণ : মহানগরীর মেহেরচন্ডি এলাকার জনৈক এক নারীরবিয়ে হয় ভাটাপাড়া এলাকায়। গত ২০১৭ সালের শেষের তিনি তার পিতার বাড়ি মেহেরচন্ডিতে বেড়াতে আসেন। হটাৎ করেই সেই এলাকায় গিয়ে অভিযানে গিয়ে এসআই হাসানের চোখ পড়ে ওই নারীর উপর। এরপর সেখান থেকেতার পিতা, চাচা ও তাকে আটক করে নিয়ে চলে আসেন ডিবিতে। ডিবিতে নিয়ে আসার পর ওই নারীর পিতা চাচা ও ওই নারীকে পৃথক করে রাখা হয়। এরপর সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করে হাসান। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম ১ লাখ টাকা দিলে পিতা ও চাচাকে ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু ওই নারীকে রেখেই দেন। ওই দিন রাতে নারীকে ডিবিতে রেখে শহরের অন্যতম নির্জনস্থান জাহাজাঘাট এলাকায় গিয়ে এসআই হাসান, সাজু ও সুমন নামের এক সোর্স মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। আর জানায় সকালে টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হবে। পরের দিন ও টাকা দিতে না পারায় ওইরাতেও তারা তিনজন মিলে আবার ধর্ষণ করে। পরের দিন পরিবারের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেয়ার পরও ওই নারীকে ১৫০ পিস ইয়াবা দিয়ে আটক দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়।

ওই নারী অভিযোগ করেন, হাসানের দেয়া মামলায় দীর্ঘ ৭ মাস কারাভোগের পর জামিন পান তিনি। এরপর থেকে আবারো হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। ওইঘটনা যেন কাউকে না জানায় এরজন্য প্রায় প্রতিদিন ফোনে হুমকি দেয় হাসান।

তিনি বলেন, আমরা নিরাপরাধ। কোন দিন থানা পুলিশ চিনি না। আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিং এ চাকরি করে।আমাদের খুবই অভাবের সংসার। এসআই হাসান আমাদের পুরো পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। আমাদেরকে অন্যায়ভাবে ধরার পর আমার মা তিনদিনে সুদের ওপর টাকা এনে তাকে দিয়েছে এরপরও হাসান আমার উপর যে শারিরিক নির্যাতন চালিয়েছে আমি কখনো ভূলবোনা।

তিনি বলেন, রাতে ডিবি থেকে বের করে মাইক্রো থেকে তুলেই বলে ক্রসফায়ার দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যা বলবো তাতে রাজি হলে ক্রসফায়ার দেবনা। এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে পরপর দুদিন আমার উপর শারিরিক নির্যাতন চালায়।

তিনি বলেন, পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা দেয়। আর হাসানের মত পুলিশ এমন নির্যাতন করে। আমি হাসানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

মটরমোকানিক আজহারকে অস্ত্র দিয়ে চালান : নগরের হরিয়ান নিমতলা এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে আজহার। মোটরমেকানিকের কাজ করে দিনানিপাত করে সে। এসআই হাসানের গাড়িও ঠিক করে আজহার। কিন্তু গাড়ি মেরামতের টাকা নিয়ে মনমালিন্যের কারণে তাকে রাস্তা থেকেতুলে নিয়ে বিদেশি অস্ত্র ও হেরোইনের মামলা দেয়। বর্তমানে আজহার কারাগারে রয়েছে।

আজহারের বাবা সাইদুর রহমান অভিযোগ করেন, তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর জানতে পারেন তার ছেলে কোর্টে আছে।এরপর সেখানে গিয়ে দেখা করার পর জানতে পারেন এসআই হাসান তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে এই মামলা দিয়েছে সাথে ব্যাপক নির্যাতন করেছে। পুরো শরীর জুড়েই নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। তিনি বলেন,এই মামলায় আরেকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমরা দিনমজুর। এসআই হাসানেরও গাড়ি ঠিক করতো আজাহার। কিন্তু তার ছেলে কি এমন করলো তার ছেলেকে তিনদিন আটকে রেখে অস্ত্র হেরোইনের মামলা দিলো।তিনি এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করে এসআই হাসানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

মাছ ব্যবসায়ী ফরহাদ হেরোইন ইয়াবা মামলার আসামি : মেহেরচন্ডি এলাকার ফরহাদ মূলত মাছের ব্যবসা করতো পাশাপাশি ডিবিরই অন্য এক কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা ছিল। এরই রেশ ধরে এসআই হাসান ফরহাদকে হেরোইন ও ইয়াবার পলাতক আসামি দেখিয়ে মামলা করে। পরে এই মামলাতে গ্রেপ্তার হন ফরহাদ। বর্তমানে ফরহাদও জেলহাজতে রয়েছে।

ঘটনার পর ফরহাদের স্ত্রী শাপলা ঘটনার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন ওফর্ধতন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দেন।

শাপলা জানান, একেবারেই অন্যায়ভাবে তারস্বামীকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে ফরহাদ কিছুই জানতো না।এ অন্যায়ের বিচার দাবি করেন তিনি।

সোর্স না হওয়ায় অটো চালক পিন্টু ফেন্সিডিল মামলার আসামি : নগরীর জাজাঘাট এলাকার পিন্টু অটো চালক। তার মোট ৩টি অটো থাকায় স্থানীয় ডিবির সোর্সের নজরে পড়েন তিনি। হটাৎ করে একদিন এসআই হাসানের নেতৃত্বে ডিবির একটি টিমতার বাসায় যায়। এরপর তার স্ত্রী ও মাকে আটক করে। স্ত্রী ও মাকে ছেড়ে দেয়া হবে এমন মর্মে ২লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না চাইলে এলাকার লোকজনের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও চালান দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে একদিন সময় নিয়ে দুটো অটো বিক্রি করে এ টাকা পরিশোধ করেন তিনি।

দু’দিন পর আবারো আসেন এসআই হাসান ।এবার ১ লাখ টাকা দাবি করে বসেন, নইলে ফেন্সিডিল দিয়ে চালানোর হুমকি। মামলা থেকে বাঁচতে শেষ অটোটাও বিক্রি করে দেন পিন্টু। কিন্তু এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি।১২ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার ও পলাতক আসামি দেখিয়ে গায়েবি মামলা দিয়ে দেন এসআই হাসান। বর্তমানে এই মামলার পলাতক আসামি পিন্টু। মামলার ভয়ে সে এখন বাড়িছাড়া। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় পরিবারটি চরম মানবতর জীবন যাপন করছে।

পিন্টু অভিযোগ করেন, এই এলাকায় মাদকপ্রবন। আমাকে সোর্স হওয়ার প্রস্তাব দেয়, কিন্তু না হওয়াতে আমার উপর এসআই হাসান আমার এ অবস্থা করেছে।

তিনি বলেন, এসআই হাসানের হাত থেকে বাঁচতে সব দিয়ে দিলাম। তারপরও তো আমাকে এলাকাছাড়া করেছে।

নির্যাতনের পানি চাওয়া মনিরুলকে দেয়া হয় থুতু : নগরীর মিজানের মোড় এলাকার যুবলীগ কর্মী মনিরুলত্রান নেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস উদ্দিনের নিকট। পথের মধ্যে বিনোদপুর বাজার থেকে তাকে আটক করে ডিবিতে নিয়ে যায় হাসান। এরপর শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন। ইলেকট্রিক শর্ট থেকে শুরু লাঠি দিয়ে শরীরের এমন কোন স্থান নেই যে স্থানে আঘাত করা হয়নি। নির্যাতনের মাত্রাই পানি চাওয়া মনিরুলকে দেয়া এসআই হাসান মুখে থুতু দেয়। পরে ১৪০ বোতল ফেন্সিডিল দিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

ইব্রাহিম কে না পাওয়ায় দুই ভাইকে আটক করে অস্ত্র দিয়ে চালান: নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার ইব্রাহিম। নগরীর শহীদ এএইএম কামরুজ্জামান উদ্যানে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার আসামি করা হয় ইব্রাহিমকে। পরে ইব্রাহিমকে ধরতে এসআই হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম তার বাড়িতে যায়। বাড়িতে ইব্রাহিমকে না পেয়ে কলেজপড়–য়া তার দুভাই ইউসুফ ও জাকিরকে বাড়ি থেকে টেনে হেঁচড়ে ধরে নিয়ে যায়। পরে বাপক নির্যাতন করে তাদের অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরো নগরীর জুড়েই এমন অসংখ্য লোককে বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। পরে রফাদফা করে ছেড়ে দেয়া নইতো টাকা নেয়ার পরও বিভিন্ন মামলায় চালান দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে হাসানের এমন কর্মকান্ডে আরএমপির অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই বিব্রত।কিন্তু তার অদৃশ্য হাতের নিকট সবই নিশ্চুপ হয়ে যায়।

অন্যদিকে মহাগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার আবু আহমেদ আল মামুন বলেন, এখন পর্যন্ত আমার নিকট এসআই হাসানের বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারেএসআই হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেগুলো সত্য নয়। ঈর্ষান্বিত হয়ে লোকজন তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে।