ডেমরায় এসএইসএস হেলথ কেয়ার হসপিটাল সিলগালা করেছে র্যাব।

র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে রোববার বিকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হাজীনগরের এস.এইচ.এস হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক্সে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় হাসপাতালের মালিক গ্রেফতার শওকত হোসেন সুমনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও ২ বছরের জেল অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ল্যাব টেকনোলজিস্ট অসীম মণ্ডলকে ভুয়া রিপোর্টে সহযোগিতা করায় ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের জেল দেয়া হয়। ফার্মেসি পরিচালক মো. কাকন খানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়া সরকার নিষিদ্ধ ওষুধের বড় চালানসহ, যৌন উত্তেজক ওষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন ওষুধ জব্দ করা হয়।
র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু নতুন সময়কে বলেন, গ্রেফতার ভুয়া ডাক্তার শওকত হোসেন সুমন গত ৩ বছর ধরে হাসপাতালটি প্রতারণামূলকভাবে পরিচালনা করে আসছে। এদিকে গত দেড় বছর আগেই হাসপাতালালের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাছাড়া ডাক্তার হিসেবে তার কোন সনদ বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। দীর্ঘদিন ধরে শওকত হোসেন সুমন প্রতারণা করে বিভিন্ন রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। আর বাড়তি রোজগারের আশায় হাসপাতালের ল্যাবে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানো হতো এবং টেস্টের রিপোর্ট বিভিন্ন নামে সে নিজেই দিতেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতারক শওকত হোসেন সুমনের আরও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ওইসব প্রতিষ্ঠানেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল অফিসার (হসপিটাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট) ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ মেহেদি হাসান বলেন, হাসপাতালটিতে সরকার নিষিদ্ধ টেপেন্টা (ইয়াবার বিকল্প) ওষুধ ও যৌন উত্তেজক ওষুধ পাওয়া গেছে। এছাড়া হাসপাতালের নিচে একটি ফার্মেসিতেও বিভিন্ন কোম্পানির মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও স্যালাইন পাওয়া গেছে যা মানব দেহে প্রবেশের সঙ্গে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। পাশাপাশি এখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সিলিন্ডারকে অক্সিজেন সিলিন্ডারে রূপান্তর করে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে রঙ করা পুরাতন ওই সিলিন্ডারগুলোতে যে কোন সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক নতুন সময়কে বলেন, ভুয়া ডাক্তার শওকত হোসেন সুমন ৩ বছর ধরে হাসপাতালটি পরিচালনা করলেও গত দেড় বছর আগেই হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
শওকত হোসেন সুমন নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিলেও তার বৈধ কোন সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
অভিযানে র্যাব-৩ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবু জাফর নতুন সময়কে বলেন, শওকত হোসেন সুমন নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিলেও আসলে তিনি কোন ডাক্তার নন। পুরুষ ও মহিলা দুই জন রোগীকে দেখার সময় তাকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। এদিকে র্যাবের পরিচয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত শওকত হোসেন তার প্রেসক্রিপসন ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করলে র্যাব তা ধরে ফেলে। অভিযান চলাকালে হাসপাতালে অনেক রোগীকে চিকিৎসা নিতে আসতেও দেখা গেছে। পরে সুমনের প্রকৃত পরিচয় পেয়ে রোগীরা চিকিৎসা না নিয়ে চলে গেছেন।
অভিযানে গ্রেফতার শওকত হোসেন সুমন বলেন, আমার নামের আগে ডা.লাগানো অন্যায় হয়েছে যা পরবর্তীতে আর করব না। আমি আসলে ডাক্তার নই। তবে হাসপাতালে ডাক্তারদের ভুল ধরার জন্য আমি হাসপাতালে বসি।
সরেজমিন জানা যায়, গ্রেফতার শওকত হোসেন সুমন প্রকৃতপক্ষে এইচএসসি পাস। প্যারামেডিকেল কোর্স করে নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে গত ৩ বছর যাবত ডেমরায় হাসপাতাল পরিচালনা করছেন তিনি। এছাড়া শওকত ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এন.পি.পি) ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী একটি আসন থেকে ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তার গ্রামের বাড়ী পটুয়াখালীর দুমকি থানা এলাকায়। তার আরও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শাহানাজ হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন, নিউ হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ হেলথ কেয়ার সেন্টার ও এস.এইচ.এস ফার্মাসিউটিক্যাল লি.। এসব প্রতিষ্ঠানে তিনি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।