ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


ডাক্তারদের বাড়তি ডিগ্রী প্রতারণা!


১৭ জানুয়ারী ২০১৯ ০৭:২০

আইন বলছে,অর্জন করেননি বা কোনো ডিগ্রীই নয়, এমন অনেক কিছুই নামের সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না। এসব অস্বীকৃত ডিগ্রি ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ব্যবস্থাপত্র, ভিজিটিং কার্ড, সাইনবোর্ড, ব্যানারে নিজের নামের শেষে বাড়তি ডিগ্রী লিখছেন অনেক ডাক্তার। কোন একটি কোর্সে অধ্যায়নরত অবস্থায়ই সেই কোর্সের নাম জুড়ে দিচ্ছেন নিজের নামের শেষে। কেউ আবার যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি নেই, এমন সব ডিগ্রীও লিখছেন নামের সাথে। লন্ডন বা ওয়াশিংটনে দু-চার দিনের সেমিনার থেকে ফিরে সেটাও ডিগ্রি হিসেবে ব্যবহার করছেন। নিজেকে বড় মাপের চিকিৎসক হিসাবে জাহির করার এই চেষ্টায় প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, এমন অভিমত খোদ বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের।

আইন বলছে,অর্জন করেননি বা কোনো ডিগ্রীই নয়, এমন অনেক কিছুই নামের সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না। এসব অস্বীকৃত ডিগ্রি ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ডা: জুয়েল দেওয়ান, নিজের নামের শেষে লিখেছেন এফসিপিএস (মেডিসিন),পার্ট- ১। এফসিপিএস কোর্স শেষ হওয়ার আগেই নামের পাশে কেন ডিগ্রী হিসাবে লিখে ফেললেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নতুন সময়কে বলেন,‘বিষয়টি সিনিয়রদের সাথে একটু আলাপ করে নেই। আপনারা পরে আসেন। আরেকদিন আসলে বলব’। ডা:মো.শরীফুল ইসলাম নামের শেষে এফসিপিএস লেখার পর একটি সূক্ষ কৌশল অবলম্বন করেছেন যা দেখে মনে হয় তিনি ইতোমধ্যে এই কোর্সটি সম্পন্ন করেছেন। তার ভিজিটিং কার্ডে লিখেছেন এফসিপিএস (শিশু স্বাস্থ্য কোর্স)। কার্ড পড়ে বুঝার উপায় নেই তিনি এখনো এই কোর্সের শিক্ষার্থী।শুধু এখানেই থামেননি তিনি, লিখেছেন ডিসিএইচ,পিজিএন (আমরিকা), যা কোন স্বীকৃত ডিগ্রী বা যোগ্যতা নয় বলে নিশ্চিত করেছে বিএমডিসি এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর। আবার সবশেষে লিখেছেন বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল), যা তার কর্মস্থল কি না তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেননি বলে অনেকে এটাকেও তার বাড়তি যোগ্যতা হিসাবে ধরে নিচ্ছে। এসব বিষয়ে নতুন সময়ের সকল প্রশ্নের জবাবে তিনি এক কথায় বলেন,‘আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই লিখেছি’।

ডা: উম্মে কুলসুমা সোমার নামের শেষে এফসিপিএস (কোর্স)লেখা রয়েছে। ডি.জি.ও (গাইনী ও অবস) কোর্স করে নিজেকে বন্ধ্যারোগ বিশেষজ্ঞ বলেও দাবী করেন তিনি। সাথে সনোলজিস্ট হিসাবেও প্র্যাকটিস করেন বলে উল্লেখ আছে তার ভিজিটিং কার্ডে। এতসব বাড়তি যোগ্যতা লিখার কারণ জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘আপনাকে বলতেতো আমি বাধ্য নই’!

নামের শেষে এমডি (বায়োকেমিস্ট্রি, অনকোর্স)লেখা ডা: সালমা বেগম নতুন সময়কে বলেন, ‘সবাই লিখে, তাই আমিও লিখি’।

ডা: জাহাঙ্গীর আলম প্রধান (জে.এ.প্রধান)নামের শেষে ডিগ্রী ব্যবহারে কোন প্রকার কার্পণ্য করেননি। এককথায় বলতে গেলে ‘যা মন চায় তাই’ লিখে রেখেছেন নিজের সাইনবোর্ড, ব্যবস্থাপত্র আর কার্ডে। এমবিবিএস, এমআরএসএইচ (লন্ডন), বিএইচএস (আপার),এমডি (কিডনী কোর্স) এমন সব ডিগ্রী ব্যবহার করা এই ডাক্তার আবার মা, শিশু, কিডনী, মেডিসিনে বিশেষ অভিজ্ঞ হিসাবে রোগী দেখছেন। প্রথমগুলো কোন স্বীকৃত ডিগ্রী নয়, তবুও কেন লিখলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘এসব লিখলে কিছু হয়না ভাই’। কোর্স চলাকালীন সময় সেই কোর্সের নাম উল্লেখ করা একটি অপরাধ কি না, এমন প্রশ্নে তার নির্বিকার উত্তর, ‘আল্লাহ রাসূল বাদ দিয়ে আপনাদের যা ইচ্ছা লিখেন আমার নামে, আমাকে জিজ্ঞেস করা লাগবেনা’।

চিকিৎসকদের পেশা চর্চার অনুমোদন, নিবন্ধন এবং দেশি-বিদেশি ডিগ্রির স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। কাউন্সিলের সহকারী রেজিস্টার ডা: মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক ফরাজী সোহেলের সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় নতুন সময়ের এই প্রতিবেদকের।তিনি বলেন, কেউ কোনো কোর্সে ভর্তি হয়ে লিখছেন এমডি, এফসিপিএস বা এমএস (ইন-কোর্স)। আবার বিদেশে কোন একটি সেমিনার থেকে ফিরে সেটাকে ডিগ্রি হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। বিএমডিসি আইনে স্বীকৃতি নেই এমন ডিগ্রি, পদবি বা প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, অস্বীকৃত নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যা দেখে অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে বলে কারও মনে হয়। অস্বীকৃত ডিগ্রি, পদবি ব্যবহার অপরাধ। এই অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা আইনে বলা হয়েছে।