ঢাকা শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫, ১৪ই আষাঢ় ১৪৩২


ধর্মের নামে সমাজকে উগ্রপন্থার দিকে নেওয়ার চেষ্টা চলছে


১১ মে ২০১৯ ০৬:২৫

বাংলাদেশেও ধর্মের নামে সমাজকে উগ্রপন্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চলছে।

শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর সভাপতিত্বে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন' ও 'সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গীবাদ বিরোধী মঞ্চ' আয়োজিত নিউজিল্যান্ড থেকে শ্রীলঙ্কা, আমাদের শঙ্কা ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক আলোচনা চক্রে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন,সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশ্যে "শীঘ্রই আসছি, ইনশাল্লাহ" লিখে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জঙ্গিরা। কয়েকদিন আগে ঢাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেফতারের মুহূর্তে ২ জঙ্গির আত্মঘাতী এবং ৫ জঙ্গির পলায়ন, খুলনায় ২ জঙ্গি গ্রেফতার এবং ১১ জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে আইএস মদদপুষ্ট বিভিন্ন দেশ থেকে বিতাড়িত জঙ্গিরা বাংলাদেশে বহাল আছে।

বক্তারা আরো বলেন, সিরিয়া ও ইরাক থেকে বিতাড়িত হবার পর আইএস বিভিন্ন দেশে হিজরতভকরে এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই বাংলাদেশেও ধর্মের দোহাই দিয়ে সমাজকে উগ্রপন্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চলছে। বিশেষ করে কওমি এবং হেফাজত মদদপুষ্ট মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম এবং এদের কিছু ওয়াজ মাহফিলে নারী সম্পর্কে যেভাবে বিষোদগার করা হয়, তাতে সরকারকে উগ্রবাদের সামনে নতজানু হয়ে থাকার দোষে দায়ী করা ছাড়া উপায় থাকে না। সম্প্রতি সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেত্রী সুলতানা কামালসহ শাহরিয়ার কবির ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন কে হত্যার হুমকি দিয়েছে 'লোন উলফ' নামক আইএস-এর একটি জঙ্গি সংগঠন।

বাংলাদেশি ইতোমধ্যেই জঙ্গিরা স্থায়িত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জঙ্গিবাদের প্রধান মদদদাতা সৌদি আরব ইদানীংকালে কিছুটা সংযত হলেও অন্যান্য আরব রাষ্ট্র থেকে উগ্র ইসলাম প্রচারের জন্য টাকা পাঠানো অব্যাহত আছে। উদ্বেগের বিষয় হল যে, শিল্প ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করে জঙ্গিবাদের অর্থের একটি স্থায়ী উৎস তারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের স্থাপন করে ফেলেছে। সূক্ষ্ম তদারকি এবং আবেক্ষণ এর দ্বারা এই স্থানীয় অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।

জঙ্গিবাদ নির্মূলে করণীয় সম্পর্কে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ থাকলেও প্রকৃত স্বস্তির পরিবেশ কেবলমাত্র দেশ ব্যাপী একটি হেলিং ক্যাম্পেইন দ্বারাই সম্ভব হতে পারে। এই ক্যাম্পেইন যে বিফলে যাবে না তার প্রমাণ পেতে পারি চার দশক আগে সিঙ্গাপুরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি সর্বমত সহিষ্ণুতার ক্যাম্পেইনকে স্মরণ করে। সে ক্যাম্পেইনের মূল সুরের যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার প্রত্যয় ছিল, তেমনি যুক্তি নির্ভরতা এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি শ্রেষ্ঠত্বের কথাও ছিল। ধর্মীয় সন্ত্রাস মোকাবেলায় আক্রমণ ও প্রতিশোধ নেবার সংস্কৃতি পরিহার করে সর্বমোট সর্বধর্ম সহিষ্ণুতার একটি প্রজন্ম পরম্পরাব্যাপী অভিযান আমাদের শুরু করতে হবে। এছাড়া সরকারের ভিতরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মন্ত্রী আমলা এবং তাদের সুবিধাভোগীদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো বাড়বে এবং সমাজকর্মী অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাবে। এদিকেও আমাদের নজর বাড়াতে হবে।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড রমণী মোহন দেবনাথ, সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গীবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ তালুকদার, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, নারী প্রগতি সংঘের রোকেয়া কবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ মামুন চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. এস এম এ সবুর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আজিজুর রহমান, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক এ কে আজাদ প্রমুখ।

নতুনসময়/রাখি/আইকে