ঢাকা শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫, ১৪ই আষাঢ় ১৪৩২


রমজানে দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ: রিজভী


৯ মে ২০১৯ ০১:২৩

ফাইল ফটো

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ক্রেতারা এমন মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ।

মঙ্গলবার( ৮মে ) দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন ।

রিজভী বলেন, বর্তমানে রমজান মাসে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ রমজানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়বে না। অথচ রমজানের শুরুতেই বাজার অস্থির।

বাণিজ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে না ঘোষনার পরদিন থেকেই হু হু করে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। বিভিন্ন পন্যের দাম বেড়েছে গড়ে তিন থেকে চারগুণ। অন্যদিকে বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্যের বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ন্ত্রন না করে প্রমান করেছেন নাগরিক সেবায় তারা ব্যর্থ। নিত্যপণ্যের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কারণ না থাকার পরেও দ্রব্য মূল্য ঊর্ধ্বমুখী, যে কারণে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট আরও বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, তাদের আয়ের পুরোটাই চলে যাচ্ছে চাল, ডাল, শাক-সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে। তা নিয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বাগাড়ম্বর করে চলেছেন। বাজারে সরকারের কোন নজরদারি নেই। তাদের নজর লুটপাটে। রোজার মাসের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন গরু ও খাসির গোস্তের দাম কেজি প্রতি যথাক্রমে ৫২৫ ও ৭৫০ টাকায় বেঁধে দিয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গরুর গোস্ত প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ এবং খাসির গোস্ত ৮০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত খাজনা ও সরকারী লোকজনের চাঁদা আদায়কে দায়ী করছেন।

তারা বলছেন, পশুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে প্রতি কেজি মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এই চাঁদাবাজির অর্থ যাচ্ছে সরকারের ওপর মহলে। আওয়ামী সিন্ডিকেট পবিত্র রমজান মাস এলেই দ্রব্যমুল্য বাড়িয়ে মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা।

তিনি আরও বলেন, লুটপাটতন্ত্র সর্বত্র জেঁকে বসেছে। সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দায় নেই। সরকার জিম্মি অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে। বাজারের দুষ্টুচক্র সিন্ডিকেট এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রকারীরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতন্ত্র ধরাছোঁয়ার বাইরে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ শেষে এখন ভাতের অধিকার এবং ন্যায় বিচারের অধিকার কেড়ে নিতে তৎপর সরকার।।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাজারে রোজার মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির গতির কোন স্পীড লিমিট নেই। রোজার প্রথম দিন কেজি প্রতি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। যা আগের দিন ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, আদা ১১০ টাকা, রসুন ১১০ টাকাসহ আলু ১৯ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলের বাজারও টালমাটাল। সবকিছুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েছে ছোলা, চিনি, তেল, আটা, ময়দা, বেসন, মুড়ি, চিড়া, গুড় ও আটার।

কোন কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। বাজার দরের মতোই সরকারের ভেতর চলছে অস্থিরতা। সরকারের সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতির কারণেই দারিদ্রের দুষ্টুচক্রে নিষ্পিষ্ট জনগণ। গণতন্ত্রহীনতা ও দারিদ্রের কারণে প্রান্তিক মানুষগুলোর অধিকার বৃদ্ধির সুযোগ ক্রমাগত নি:শেষিত হচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা দাবি জানিয়ে আরও বলেন, সব ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ এই মিডনাইট নির্বাচনের অন্ধকারের সরকারকে বলবো-দ্রুত পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দেশের জনগণের ঘাড়ে জোর করে চেপে থেকে আর কষ্ট দিবেন না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুচিকিৎসা না পেয়ে দু:সহ যাতনা ভোগ করছেন। তাঁকে মুক্তি দিলে তিনি তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে পারবেন। ভালোভাবে রোজা পালন করতে পারবেন। আদালতকে কুক্ষিগত করে রেখে তাঁর জামিনে পদে পদে বাধা দেয়া বন্ধ করুন। জামিনে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন।


নতুনসময়/আনু/এসআই