ঢাকা শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫, ১৪ই আষাঢ় ১৪৩২


লাবণ্য নিহতের ঘটনা তদন্তে উবার কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা


২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৯

উবারের মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতির কাভার্ড ভ্যানচাপায় নিহত হয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য। এ ঘটনা তদন্তে উবার কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গাফিলতির প্রমান পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, উবারের মোটরসাইকেল চালক সুমন বেপরোয়া গতিতে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন এবং অসৎ উদ্দেশে বার বার ব্রেক করছিলেন। দুর্ঘটনার পর দায় এড়াতে মোবাইল ফোন বন্ধ করে সুমন পালিয়ে যান। পরে চালককে খুঁজে পেতে উবার কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য চাওয়া হলে তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। এছাড়া চালক সুমন উবারে রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন। উবারের এসব গাফিলতির কারণে সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। ঘটনার বিস্তর তদন্তে যাদের গাফিলতির প্রমান পাওয়া যাবে তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) আশুলিয়ার বাইশ মাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটি জব্দসহ চালক আনিসুর রহমানকে (২৮) আটক করা হয়। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসা থেকে উবারের মোটরসাইকেল চালক সুমনকে আটক করা হয়।

রোববার (২৮ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।

তিনি বলেন, গত ২৫ এপ্রিল সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাবণ্য নিহত হয়েছেন। লাবণ্য শ্যামলী এলাকার নিজ বাসার সামনে থেকে উবারের মোটরসাইকেলে করে খিলগাঁও ছায়াবিথী এলাকায় যাচ্ছিলেন।
বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলটি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ড ভ্যান মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে লাবণ্য মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই মোটরসাইকেল চালক ও ঘাতক কাভার্ড ভ্যান চালককে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশে-পাশের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুর্ঘটনার স্পষ্ট কিছু পাওয়া যাচ্ছিলো না। মোটরসাইকেল চালক সুমন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পুলিশ যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান। হাসপাতালে সুমন যে ঠিকানা দিয়েছিলো, সে অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভুল ঠিকানা দিয়েছিলো।

উবারের কাছে সুমনের যে ঠিকানা ছিল সেখানে খোঁজ নিয়ে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তায় গত ২৬ এপ্রিল ভোরে মোহাম্মদপুর থেকে সুমনকে মোটরসাইকেলসহ আটক করা হয়।

উবারের মোটর সাইকেল চালক সুমনের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও সে অনেক কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করছিল।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে কাভার্ডভ্যানটির নাম্বার পাওয়া না গেলেও ‘ইনফো ফোর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তেজগাঁও কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় থেকে ঘাতক কাভার্ড ভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেফতার করা হয়।

মোটরসাইকেল চালক ও কাভার্ডভ্যান চালককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, দুইজনই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলের চেয়ে যেহেতু কাভার্ড ভ্যানের গতি বেশি, তাই কাভার্ড ভ্যানটি মোটরসাইকেলটিকে ওভারটেক করার সময় ধাক্কা দেয়। এতে শিক্ষার্থী লাবণ্য পড়ে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হন।

ডিসি আরও বলেন, কোন ব্যক্তির বিষয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া ভুল ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করে ফেললো উবার কর্তৃপক্ষ। এতে মোটরসাইকেল চালক সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো। যে কোনো ঘটনার পর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দ্রুত চেষ্টা করি, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের পদে পদে বাধা পেতে হলো।

এছাড়া, উবারসহ রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে চালানোর জন্য চালকের শারীরিক ও মানষিক দক্ষতা রয়েছে কি না সেগুলোও যাচাই-বাছাই করে না। ওইদিন চালক সুমন বেপরোয়া গতিতে বাইক ড্রাইভ করছিলেন এবং অসৎ উদ্দেশ্যে বার বার ব্রেক করছিলেন।

ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে অসংখ্যবার উবারের কাছে তথ্য চাওয়া হলেও তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি বলেও জানান ডিসি বিপ্লব।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে মূল অভিযুক্ত কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। উবারের মোটরসাইকেল চালক সুমনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে তার অবহেলা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাফিলতির জন্য উবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কি না জানতে চাইলে ডিসি বিপ্লব বলেন, ঘটনার আরও তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় যাদের গাফিলতি প্রমান পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।


নতুনসময়/এনএইচ