ঢাকা শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫, ১৪ই আষাঢ় ১৪৩২


শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা,দেশজুড়ে বাড়তি সতর্কতা


২৮ এপ্রিল ২০১৯ ২২:২৯

শ্রীলঙ্কায় গত রবিবার বোমা হামলার ঘটনায় দেশে জঙ্গিবাদ দমনে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। মসজিদগুলোর খুতবায় নজরদারি রাখা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও তরুণসমাজকে সচেতন করতে আলোচনাসভার আয়োজন করা হচ্ছে। সে সঙ্গে পুরো দেশে পুলিশ সুপার, বিভাগীয় ডিআইজি, মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি। গত সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

অন্যদিকে গত শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক সমাবেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আছে। শ্রীলঙ্কার মতো হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের ওপর আমাদের নজর দেওয়া উচিত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিটি মসজিদে খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ান দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মসজিদের খুতবায় নজর রাখছে। একই সঙ্গে মাদরাসাগুলোতে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, শিক্ষার আড়ালে সেখানে কোনো ধরনের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে কি না। স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহাগর পুলিশ ও র‌্যাব সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে আলাদা টিম গঠন করে ঢাকাসহ পুরো দেশে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুমার নামাজের সময় খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ান ঠিকমতো হয় কি না তার খোঁজ নিতে সেখানে গিয়েছিলেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি মতিঝিল) শিবলি নোমান বলেন, বায়তুল মোকাররমে আগে থেকেই জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা আছে। শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার পর এ নিয়ে বাড়তি নজরদারি চলছে।

র‌্যাবের পক্ষ থেকেও পুরো দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা ঘটনার পরপরই পুরো দেশে র‌্যাবের সব ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রধান সড়কসহ গলির রাস্তাগুলোতেও র‌্যাবের টহল টিম সতর্ক রয়েছে।

জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এ টি এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার পর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ান দিতে জেলার প্রতিটি মসজিদের ইমামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে এপিবিএনের ডিআইজি লুৎফর রহমান মণ্ডল বলেন, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার পর দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঢাকার আটটি ক্রাইম বিভাগের ডিসিদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কূটনৈতিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার পরপরই কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, জঙ্গিরা আগের মতো সংগঠিত নয়। তবে এর মধ্যেও আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), জেএমবি এখনো মাঠপর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে সক্রিয়। তাদের সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীর, হরকাতুল জিহাদ হুজিসহ আরো কিছু জঙ্গিবাদী সংগঠন গোপনে তাদের দাওয়াতি কর্মকাণ্ড সক্রিয় রেখেছে। জঙ্গিরা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটে বেশি সক্রিয়।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বড় ধরনের হামলা চালানোর শক্তি নেই। হলি আর্টিজান হামলার পর কয়েকটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি শুরুতেই প্রতিহত করা হয়েছে। এর পরও শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডে হামলার ঘটনায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নতুনসময়/আইকে