ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৬শে জুন ২০২৫, ১৩ই আষাঢ় ১৪৩২


দূর্ঘটনা রোধে সড়কে নামানো হচ্ছে নারী চালক


৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১৭

ফাইল ছবি

আগামী দুই বছরের মধ্যে সারা দেশে এক লাখ দক্ষ গাড়িচালক ও চালকদের জন্য এক হাজার দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রত্যেকটি জেলায় সরকারি ড্রাইভিং স্কুলে চার মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব চালক তৈরি করা হবে।পুরুষদের পাশাপাশি নারী প্রশিক্ষণার্থীরা প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রশিক্ষণের চার মাসে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ৯ হাজার টাকা করে ভাতা ও দুপুরের খাবার দেওয়া হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নতুন সময়’র সাথে ফোনালাপে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ২৩টি জেলায় এই প্রশিক্ষণ চালু করেছি। পর্যায়ক্রমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্যান্য জেলাতেও প্রশিক্ষণ চালু করব। দুই বছরের মধ্যে এক লাখ দক্ষ চালক তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।এবার নারী চালক তৈরিতে জোর দিব আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু গাড়িচালক হওয়ার জন্য অত্যন্ত গরিব ঘরের ছেলেরা আসবে, তাই প্রশিক্ষণের সময় তাদের দুপুরের খাবার দেওয়া হবে এবং চার মাসের প্রশিক্ষণের জন্য ৯ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। এজন্য প্রশিক্ষণার্থীদের কোনো ফি দিতে হবে না।’

সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা নতুন সময়কে জানান, সাধারণত নারীরা গাড়ি চালানোর সময় ঝুঁকি কম নেন এবং নিরাপদে গাড়ি চালান। তাই নারীদের এই পেশায় আসতে উৎসাহিত করার জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নারী মোটরযান চালকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে তারা সুপারিশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দেশে অনেক শিক্ষিত বেকার আছে যারা মানসম্মত প্রশিক্ষণ, সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেলে ড্রাইভিং পেশায় আসতে উৎসাহী হবে। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে অন্যদিকে দক্ষ মোটরযান চালক বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে। দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে আসবে। এই লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের জন্য সহজ শর্তে কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক লোন দেওয়া হবে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সুপারিশেও মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা, লাইসেন্সপ্রাপ্ত দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) প্রকল্প প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি জেলায় চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, সরকারি খরচে প্রশিক্ষক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষক বিহীনভাবে কোনো ব্যক্তি যাতে গাড়ি চালানো শিখতে না পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার ও সরকারি পরিবহন পুলসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস থেকে অবসর পাওয়া চালকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এক লাখ চালক তৈরির লক্ষ্যে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত এক হাজার দক্ষ প্রশিক্ষকও তৈরি করা হবে। ড্রাইভিং স্কুলের প্রশিক্ষকদের মানদ- নির্ধারণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস প্রস্তুত ও সহজ ভাষায় একটি ড্রাইভিং ম্যানুয়াল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অযান্ত্রিক বাহন যেমন রিকশা, সাইকেল ভ্যানসহ অন্য যানের চালকদের হাতেকলমে শিক্ষা দিতে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হবে। এজন্য বিআরটিএ, বিভিন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোনো চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার আগে বিআরটিএ কর্তৃক স্বীকৃত ড্রাইভিং স্কুলের সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হবে। বিআরটিএ ওই সনদ যাচাই করে লাইসেন্স প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবে। তবে বিষয়টি আগামী ২০২০ সাল থেকে র্কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি লাইসেন্স নবায়নের সময় চালকদের দুদিনের প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছে।

এক লাখ চালক তৈরির যৌক্তিকতা তুলে ধরে শাজাহান খান বলেন, ‘নাবিক তৈরি, চিকিৎসক তৈরিসহ অনেক খাতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। দক্ষ চালক তৈরির জন্য ভর্তুকি দিলে দক্ষ চালক তৈরি হবে এবং বিদেশেও তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’

এদিকে বুধবার মিরপুর বিআরটিএ অফিসে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা হয়। ওই সভায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে ১১১ দফা সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কাউন্সিলের সভাপতি শাজাহান খান আরও বলেন, ‘আমরা সুপারিশগুলো আজ বৃহস্পতিবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় দেশের বাইরে থাকায় আমারা সেগুলো জমা না দিয়ে ওয়েবসাইটে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর বিষয়ে কারও কোনো পরামর্শ থাকলে সেটা তারা আমাদের অবহিত করতে পারেন। আমরা তাদের পরামর্শগুলো আমলে নেব। এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী দেশে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার কাছে হস্তান্তর করব।’