দুদকের অভিযানে পাল্টে গেছে হাসপাতালের দৃশ্যপট

রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে গোদাগাড়ী উপজেলা সদর। এখানেই অবস্থিত গোদাগাড়ী ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল। বিশেষায়িত এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য সব সরঞ্জামই আছে। শুধু থাকেন না চিকিৎসক। দুদকের অভিযানের কারণেই হাসপাতালটির আগের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। গতকাল বুধবার বহির্বিভাগে বসে তারা রোগিদের সেবা দিয়েছেন। ভর্তি থাকা রোগিদেরও খোঁজখবর নিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
হঠাৎ হাসপাতালটির এমন পরিবর্তনের পেছনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযান। গত সোমবার দুদক সারাদেশের যে ১১টি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে তার মধ্যে এই হাসপাতালও একটি। অভিযানের পর দুদক বলেছে, ঢাকার বাইরের সাত জেলার হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, ১৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৮১ জনই অনুপস্থিত ছিলেন, যা মোট চিকিৎসকের প্রায় ৬২ শতাংশ। দুদকের অভিযান চালানো এই হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসকের সংখ্যা দুজন। তারা হলেন, ডা. শওকত আলী ও ডা. তৌফিক রেজা। এছাড়া রয়েছেন একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তার নাম ডা. ওয়াহিদা খাতুন। তাদের থাকার জন্য হাসপাতালটিতে কোয়ার্টারও আছে। কিন্তু কেউ থাকেন না। সবাই থাকেন জেলা সদরে।
স্থানীয়রা বলছেন, চিকিৎসকদের মন চাইলে হাসপাতালে যান, না চাইলে যান না। তবে মঙ্গলবার থেকে সবাইকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন বলছেন, দুদকের অভিযানের কারণেই তারা এ দিন হাসপাতালে এসেছেন। এতো দিন বহির্বিভাগে যে কোনো একজন করে হাসপাতালে থেকে রোগিদের সেবা দিয়েছেন। দুজন কোনো দিনই আসেননি। কোনো কোনো দিন একজনও আসেননি। আবার রাতেও কেউ থাকেননি। তারপরেও হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদা খাতুনকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা হাজিরা খাতায় প্রতিদিনেরই স্বাক্ষর দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদা খাতুন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের ডাক্তারের সংখ্যাই কম। এতো স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল চালানো কঠিন। দুদকের অভিযানের সময় এই চিকিৎসক নিজেও হাসপাতালে ছিলেন না। সে বিষয়ে তিনি বলেন, রাজশাহীতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আমার সভা ছিল। আমি সেখানে ছিলাম।
এদিকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক না থাকার কারণে রোগিরাও থাকতে চান না। ছোট-খাটো শারীরিক সমস্যার কারণেও তাদের গোদাগাড়ী থেকে যেতে হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অনেকেই চিকিৎসা নেন উপজেলা সদরের বেসরকারি ক্লিনিকও হাসপাতালগুলোতে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে ১২ জন নার্স ও ৪ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। চিকিৎসক না থাকার কারণে তাদেরকেই চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হয়। একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বলেন, দুদক অভিযান চালিয়ে ভালই করেছে। এখন যদি ডাক্তার থাকেন! আমাদের কাজের চাপ কিছুটা কমবে। হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, তিনজন চিকিৎসকের যে কোনো একজনকে হাসপাতালে সব সময়ের জন্য থাকতে হয়। রাত-বিরাতে রোগি ভর্তি নেওয়া এবং ভর্তি থাকা রোগিদের সেবা তিনিই দেবেন। কিন্তু রাতে কেউ থাকেন না। হাসপাতালের ২১ জন নার্স এবং চারজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পালা করে দায়িত্ব পালন করেন। ভর্তি থাকা রোগিদের কাছে তারাই হয়ে ওঠেন শেষ ভরসা। এতে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ যায় অনেকের। তাই হাসপাতালে রোগিরাও ভর্তি থাকেন না। ছোট-খাটো শারীরিক সমস্যার জন্য তাদেরও যেতে হয় জেলা সদরে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেসবাউল হাসান খান বলেন, চিকিৎসকদের হাসপাতালে রাখার জন্য তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন। জেলার সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, দুদকের অভিযানের বিষয়টি তিনি জানেন। দুদক কোনো লিখিত প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থ্য নেওয়া হবে।