ঢাকা সোমবার, ২৩শে জুন ২০২৫, ১০ই আষাঢ় ১৪৩২


আবজালের ‘দুর্নীতি সঙ্গী’ রুবিনা


১৬ জানুয়ারী ২০১৯ ০৬:১৭

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি আবজাল-রুবিনা দম্পতির সম্পদের প্রাথমিক হিসাব দেখে হতবাক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। দুর্নীতিবাজ এই দম্পতি যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’র সন্ধান পেয়েছিলেন। স্বামীর দুর্নীতির এই মিশনে সমানতালে সঙ্গ দিয়েছেন স্ত্রী রুবিনা। আপাতত দেশে তাদের সকল সম্পদের হিসাব পেলেও, বিদেশে তাদের যে পরিমান সম্পদ আছে তার হিসাব নিতে আরও বহুদিন সময় লাগবে বলে জানায় দুদক।

দুদকের অনুসন্ধান টিমের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে আবজাল-রুবিনা দম্পতির সম্পদ বিবরণীর প্রাথমিক তথ্য। তাতে দেখা গেছে আবজালের নামে ঢাকায় ৬টি বাড়ি, স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে ঢাকায় আরও ৮টি বাড়ি ও জমির হিসাব পাওয়া গেছে।

আবজালের নামে ঢাকার উত্তরায় ১৫/সি সেক্টরে ২/বি সড়কে ২৪ ও ২৬ নম্বর সেক্টরে ৩ কাঠার দু’টি প্লট, মিরপুরের পল্লবীর বাউনিয়া মৌজায় ৬ কাঠা জমি, একই মৌজায় আড়াই কাঠার টিনশেড বাড়ি, খিলক্ষেতের ডুমনী মৌজায় ৩ কাঠা জমি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে ১২৫/এ নম্বওে চার কাঠার প্লট রয়েছে। ফরিদপুরের কোতয়ালী পৌরসভার রঘুনন্দনপুর মৌজায় সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি, একই এলাকার হাবেলী মৌজায় সাড়ে ১০ শতাংশ জমিতে দোতলা বাড়ি, খুলণার খালিশপুর বয়রা মৌজায় সাড়ে তিন কাঠা জমি, ফরিদপুরের টেপাখোলা ইউনিয়নে এক একর ২৭ শতাংশ জমি, রাজবাড়ি জেলার বসন্তপুর মৌজায় দুই একর ৩০ শতাংশ জমি, খুলনা খালিশ পুরে বয়রা মৌজায় সাড়ে ৫ কাঠা জমি।

রুবিনা খানমের ঢাকার উত্তরার ১৩ নম্বও সেক্টরে ১১ নম্বর সড়কে তিন কাঠা এক শতাংশ জমিতে ৬ তলা বাড়ি, একই সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কে ৩ কাঠা জমিতে ৬ তলা বাড়ি, বাড্ডায় এর আর কমপ্লেক্সে ১১৪৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মিরপুরের বাউনিয়া মৌজায় ০২৪৭.৫ অযুতাংশ জমিতে টিনশেড বাড়ি, এক নং বাউনিয়া মৌজায় আড়াই কাঠা জমি, সাভারের বিরুলিয়ায় ১৫ শতাংশ জমি, ফরিদপুরের কোতয়ালী মৌজায় চরপ পশ্চিত টেপাখোলায় ৮ শতাংশ, ৯ শতাংশ ও সাড়ে ৫ শতাংশ জমি, ঢাকার কেরানী গঞ্জের পূর্ব আগানগর খাজা সুপার মার্কেটে বিমাল ২টি দোকান, ফরিপুরের কোতয়ালী হাবেলী গোপালপুরে নির্মানাধীন দোতলা বাড়ি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ব্লক নং ৩০৬৬ ও ৩০৬৭ নম্বরে তিন কাঠার দুটি প্লট রয়েছে। স্টেনোগ্রাফার হলেও রুবিনা খানমের রয়েছে যার ২০১৪ মডেলের ২০০০ সিসি লেটেস্ট ব্রান্ডের হ্যারিয়ার গাড়ি।

এছাড়া এই দম্পতির অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে ৭, পন্টার স্ট্রিট মিন্টু, সিডনীতে একটি বাড়ি রয়েছে। যা তার দূর সম্পর্কের মামা বদিউর রহমান দেখাশোনা করেন। বনানীর জনৈক হুন্ডি ব্যবসায়ী লোকমানের মাধ্যমে ওই বাড়ি দুই লাখ ডলার দিয়ে ক্রয় করেছেন।


আবজালের বয়স ৪৫ বছর। ১৯৯২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ পাওয়া আবজাল আর পড়ালেখা করেননি। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে প্রকল্প সমন্বয়কারির কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে অফিস সহকারির বদলী পদে চাকুরি নেন। এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ক্যাশয়ার পদে তাকে বদলী করা হয়। পরবর্তীতে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে মেডিকেল এডুকেশন শাখা মহাখালীতে কর্মরত ছিলেন।


তার স্ত্রী রুবিনার বয়স ৩৯ বছর। তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বয়স ৩৯ বছর। তিনিও আবজালের মতো একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন এবং ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তিনি ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যশনাল নামে ১৫/১ আলব্দীর টেক কালীবাড়ি, বালুঘাট ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ঠিকানায় একটি ট্রেড লাইসেন্স করেন। মূলত এই ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল কাজ ভুয়া টেন্ডারে বাগিয়ে নেন আবজাল।


আবজাল দম্পতির এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে রুমান আহমেদ রাকিব বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়ণরত। কণ্যা রূপা অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে পড়তো। বর্তমানে ঢাকায় লেখা পড়া করছে। ছোট মেয়ে আদিবা সুলতানা রথি বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে।
আবজালের দুই ভাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। রবিনার তিন ভাইও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। ভাই শ্যলক মিলে সাত জন একই অধিদপ্তরে কর্মরত।

তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত শতকোটি টাকা মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।