ঢাকা সোমবার, ২৩শে জুন ২০২৫, ১০ই আষাঢ় ১৪৩২


ফিরেছে আশরাফের মরদেহ, বিমানবন্দরে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ


৬ জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:২৪

সৈয়দ আশরাফের মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে ফেরত এসেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ।

শনিবার সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফের মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মরদেহ গ্রহণ করেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ নিতে বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি টার্মিনালে সিনিয়র নেতারা ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত রয়েছেন।

ভিআইপি টার্মিনাল সংলগ্ন রানওয়েতে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ নিতে এ মুহূর্তে অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য নওফেল চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এছাড়া উপস্থিত রয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরাও।

মরদেহ রাজধানীর ২১ বেইলি রোডের বাসায় আনা হবে। রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমইচ) হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম জানাজায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার অংশ নেবেন। এই জানাজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর সৈয়দ আশরাফুলের স্ত্রী শীলা ইসলাম মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক কন্যার জনক আশরাফুল ইসলাম ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। এ অবস্থাতেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন সৈয়দ আশরাফ।

একাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত এমপিদের মধ্যে ২৮৯ জন শপথ নিয়েছেন বৃহস্পতিবার। অসুস্থতার কারণে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এদিন শপথ নিতে পারেননি। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পর তার শপথ নেয়ার কথা ছিল।

১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দশম সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।

তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আশরাফুল ইসলাম ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যখন আব্দুল জলিল গ্রেফতার হন, তখন সৈয়দ আশরাফুল আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে আশরাফুলের বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফুল যুক্তরাজ্যে চলে যান। লন্ডনের হ্যামলেট টাওয়ারে বসবাস শুরু করেন। লন্ডনে বসবাসকালে তিনি বাংলা কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। সেসময় তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ যুব লীগের সদস্য ছিলেন। আশরাফুল ইসলাম ফেডারেশন অব বাংলাদেশি ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের (এফবিওয়াইইউ) শিক্ষা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালের জুনে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন। এক মাস এক সপ্তাহ দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন তাকে।