ঢাকা সোমবার, ২৩শে জুন ২০২৫, ১০ই আষাঢ় ১৪৩২


র‌্যাবের জালে টাঁকশালের মালিক দম্পতি গ্রেফতার


৬ জানুয়ারী ২০১৯ ০২:২৫

ছবি সংগৃহিত

জাল টাঁকশালের’ মালিক সাগর-হোসনে আরা দম্পতি পুরান ঢাকায় গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১০ । বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন জাল নোট তৈরির কাজে।

নিজের বাসায় গড়ে তুলেছিলেন ‘টাকশাঁল’। এই টাকশাঁলে তারা তৈরি করেছেন লাখ লাখ টাকার বাংলাদেশ ও ভারতীয় জাল মুদ্রা।এখন স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই র‌্যাবের হেফাজতে বন্দি।

সাগর র‌্যাবকে জানান, প্রায় ৬ মাস ধরে তিনি বাসায় ‘টাকশাঁল’ খুলে জাল নোট ও জাল রুপি তৈরি করে আসছিল।২০১৮ সালের প্রথমদিকে তার ব্যবসায় অনেক লোকসান হয়। এতে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন তার এক ভাই।

তিনিও কয়েক মাসের মাথায় মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যু শোক ও ঋণের যন্ত্রণা- দুইয়ে মিলে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন সাগর। পুরান ঢাকায় তার কাঠের ব্যবসা ছিল।জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে একদিন বাহাদুরশাহ পার্কের বেঞ্চে বসে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আনমনা হয়ে ভাবছিলেন।

ঠিক তখন তার সামনে এসে দাঁড়ান এক তরুণ। সাগর নিজেকে একটু হালকা করতে ভাইয়ের মৃত্যু, আর্থিক অনটনসহ সব কথা খুলে বলতে শুরু করলেন তার কাছে।কথা শেষ হতেই বললেন, ‘নো টেনশন। আমার কাছে আপনার সব সমস্যার সমাধানের চাবি আছে।

আপনি গ্রহণ করতে চাইলে আমি আপনাকে দিয়ে দেব। অল্প পরিশ্রমে অল্প দিনে বড়লোক হতে পারবেন।’

সাগর জানতে চাইলো সেটা কি কাজ? সে তরুণ বললো, আগে বলেন রাজি আছেন কিনা । সুযোগটা হাতছাড়া না করে রাজি হয়ে যান সাগর।
এরপর সাগরকে গোপন আস্তানায় নিয়ে তিনি ট্রেনিং দিলেন। ১৫ দিনেই জাল নোট তৈরিতে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠলেন সাগর। তারপর সাগরকে টাকশাঁলের যাবতীয় মেশিনারিজ কিনে দিলেন নিজের টাকায়।

কদমতলী এলাকার বাসায় বসে জুলাই মাস থেকে শুরু হল জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরি।পরে ওই তরুণ নিজেকে টাকা তৈরির উস্তাদ হিসাবে দাবি করেন। তার পর থেকে সাগর এ কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন শুরু করতে থাকে।

নিরাপত্তার কথা ভেবে আগস্ট মাসে কদমতলী থানাধীন নতুন রাজাবাড়ী আজাদ হাউজিং রুলিং মিল সাততলা ভবনের ৭ম তলার পশ্চিম পাশে বি-৭ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিলেন সাগর। ওই বাসায় বসে তৈরি করতে লাগলেন জাল টাকা ও রুপি। স্ত্রী হোসনে আরা সাগরকে সহযোগিতা করতেন।

র‌্যাব-১০ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. আশরাফুল হক জানান, সাগরের কাছে যে সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে, তা দিয়ে অন্তত ৫ কোটি জাল নোট তৈরি করা যেত। সাগর জানিয়েছে, সে ৬ মাস ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যে তাকে এই পেশায় নিয়ে এসেছে সে-ই মূলহোতা বলে আমরা সন্দেহ করছি।

তদন্তের স্বার্থে এখনই মূলহোতার নাম প্রকাশ করছি না। তাকে গ্রেফতারে সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি জানান, এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করে সাগর ৫ হাজার টাকার মতো পেত। জাল নোটের একটা সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট কাজ করে। সাগর তৈরি করে। একটি গ্র“প তার বাসা থেকে নিয়ে যায়।

হাতবদল করে আরেকটি গ্রুপের হাতে দিয়ে দেয়। সেই গ্র“পটি সুবিধামতো দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়। জাল রুপি সম্পর্কে তিনি বলেন, জাল রুপির ব্যবহারটা বেশি হয় দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায়। এছাড়া সাগর কাঠের ব্যবসা, ফরাশগঞ্জে তার শ্বশুরের ব্যবসার মাধ্যমেও জাল নোট ছড়াত। এ সংক্রান্ত তথ্যও রয়েছে র‌্যাবের হাতে। সাগর ওরফে সুমন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মহালঙ্কা গ্রামের কাজী আশরাফের ছেলে।

র‌্যাব-১০ গোপন সূত্রে তাদের টাকশাঁলের খবর পায়। গত বৃহস্পতিবার সেখানে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সাগর ওরফে সুমন (৩৭) ও তার স্ত্রী হোসনে আরাকে (৩৫) আটক করে।

এ সময় সরঞ্জামাদির মধ্যে স্কিন ডাইস, সলিট স্কিন ডাইস, মাথা স্কিন ডাইস, সিলভার স্কিন ডাইস, ফ্লাই বোর্ড, ফুয়েল পেপার রোল, ফুয়েল পেপার যুক্ত টিস্যু পেপার (যা জাল ছাপযুক্ত), জাল টাকা তৈরির কাগজ, স্পিরিড, ফেবিকল গাম, প্রিন্টিং আইকা, স্কাফ রাবার, প্রচুর পরিমাণে টাকা তৈরির সবুজ ফিতা পাওয়া যায়। এছাড়াও ৯ লাখ টাকার জাল নোট, ৩ লাখ জাল অসমাপ্ত ইন্ডিয়ান রুপি, ১ লাখ ইন্ডিয়ান রুপি তৈরির ফিতা, ৪টি মোবাইল সেট এবং জাল টাকার নোট তৈরির উদ্ধার করা হয়।