প্রকল্প শুরুর আগেই ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই আসবাবপত্র ও ল্যাপটপ ক্রয়ের নামে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও অফিস এরিয়ার মধ্য থেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মেহগনি গাছ আত্মসাৎ করে সরিয়ে নেয়ার সময় তা আটক করে পুলিশ।
২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হলে নড়েচড়ে উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস ও জেলা প্রশাসন। রোববার জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মালামাল না কিনেই কোটেশনের মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশা শনিবার রাতে ও রোববার সকালে বরিশাল থেকে কিছু নতুন প্যাকেট ফার্নিচার অফিসের বিভিন্ন কক্ষে রাখা শুরু করেছেন।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলা সদরের সুগন্ধা নদীর তীর রক্ষার জন্য ৬৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। ৩৪ প্যাকেজের এ প্রকল্পে নলছিটির দপদপিয়া থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর ভাঙন কবলিত অংশ এবং গাবখান নদীর ভাঙন কবলিত অংশে জিও ব্যাগ এবং সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা। এরমধ্যে নলছিটির দুটি প্যাকেজে ৭৪০ মিটার প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আরো ৮টি প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন।
এছাড়াও নয়টি প্যাকেজের সিডিউল বিক্রির শেষদিন ২১ অক্টোবর। কিন্তু মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই গত জুন মাসে নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশা গোপনে তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কোটেশন দেখিয়ে ল্যাপটপ, ফটোকপি মেশিন এবং আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ২৫ লাখ টাকার বিল করে উঠিয়ে নেন। আগে থেকেই অফিসে ল্যাপটপ, ফটোকপি মেশিন ও আসবাবপত্র থাকায় কোনো কিছুই কেনা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের এক কর্মচারী জানান, ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে আগে থেকেই ৮টি কম্পিউটার, তিনটি ল্যাপটপ ও একটি ফটোকপি মেশিন ছিল। গত এক বছরে নতুন কোনো কিছু অফিসে আসতে দেখিনি। শুনেছি তিনজন ঠিকাদারের নামে স্যার টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে নির্বাহী প্রকৌশলী শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে হাতিল এবং নাভানার কিছু চেয়ার-টেভিল-আলমিরা কিনে রাতেই ঝালকাঠি অফিসের নতুন ভবনে নিয়ে আসেন।
রোববার দুপুরে ঝালকাঠি পানি উন্নন বোর্ডের নতুন ভবনে কাজ করা শ্রমিক মো. শহিদ বলেন, এতদিন এখানে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। শনিবার রাতে এবং রোববার সকালে পিকআপভ্যানে কিছু আসবাবপত্র এসেছে। এদিকে রবিবার সকাল ১০টায় ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় নির্বাহী প্রকৌশলীর ২৫ লাখ টাকার অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী খলিলুর রহমান জানান, সভার একপর্যায় নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন নির্বাহী প্রকৌশলী জেলা প্রশাসককে জানান, আসবাবপত্র কিনে অফিসে জায়গা না থাকায় নিরাপদে অন্যত্র রাখা হয়েছিল। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলেই সব আসবাবপত্র অফিসে আনা হবে, এরমধ্যে কিছু আনা হয়েছে।
নিলয় পাশার বক্তব্যের পরে জেলা প্রশাসক ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প এবং ২৫ লাখ টাকার কোটেশনের যাবতীয় কাগজপত্র জেলা প্রশাসককে দেখানোর নির্দেশ দেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, কোটেশনের মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। শনিবার রাতে কোনো ফার্নিচার আনা হয়নি। তবে কিছুদিন আগে আনা হয়েছে। জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় আমি ব্যাখ্যা দিয়েছি। জেলা প্রশাসক আমার কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আমি তা প্রমাণ করতে পারব।