আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির সদস্যদের পেশাদারিত্বের পরিচয়

# কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন
চলমান কোটা সংস্কার অন্দোলনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল খালি করার নির্দেশনা দেয়। দুপুরে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক একেএম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও চরম ধৈর্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে এবং কোথাও যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে। পরে পুলিশী তৎপরতায় সন্ধ্যার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। হল ছেড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে পুলিশ যাতে তারা নির্বিঘ্নে যেতে পারে।
এর আগে বিকেল চারটার পর পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার স্বার্থে ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এড়াতে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়তে বাধা দেয় পুলিশ। পরে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়েন। জানাজা শেষে ক্যাম্পাসে কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেইসময় পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করছিলো কিন্তু হঠাৎশিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে ভিসির বাসভবন ও আশপাশের নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্য ওই মিছিলে সীমিত সংখ্যক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা আবার সূর্য সেন হলের সামনে এসে জড়ো হন।
অতপর পুলিশ সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। অপর দিকে শিক্ষার্থীরা মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সামনে থেকে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। রাজধানীর সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ দেশের প্রায় সব মহাসড়কে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় তীব্র যানযট ও চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। গতকাল সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দাবী দাওয়ার অহিংস আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিতে শুরু করে। জনদূর্ভোগের পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও ঘটে এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী।
গত কয়েক দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডিএমপির পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেনো বহিরাগত কেউ না থাকে সেটি নিশ্চিতকল্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়।
রাজধানীর শনির আখড়ায় আজ বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।ঘটনাস্থলে কয়েক’শ শিক্ষার্থী হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে পুলিশ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্নস্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধরে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুইজন আহত হয়েছেন। বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে ঢাবির সূর্যসেন হল ও বিজয় একাত্তর হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে একজন ঢাবি শাখার ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওয়ালি উল্লাহ ও অপরজন বিজয়’৭১ হলের ছাত্র নাঈম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের কোটা আন্দোলনচলাকালীন সময় প্রায় ৪০জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। আহত হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ভাস্কর ভাদুড়ি, সময় টেলিভিশনের ভিডিও জানালিস্ট রতন মজুমদার, কালবেলা পত্রিকার আকরাম হোসেন ও জনি রায়হান, আলোকিত প্রতিদিনের ইমরান হোসেনসহ আরও কয়েকজন। নীলক্ষেত মোড়ে আহত হয়েছেন আজিমপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) ইব্রাহিম খলিল। লালবাগ থানার এসআই নাজমুজ্জামান জানান, ইডেন কলেজের এক নম্বর গেট থেকে রিকশা করে আজিমপুর ফাঁড়িতে যাচ্ছিলেন ইব্রাহিম। পথে নীলক্ষেত কোয়ার্টারের গেটে আন্দোলনকারীরা তাকে ধাওয়া দেয়। ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে তার মাথায় আঘাত লাগে।
আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন সময় হামলায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা মো. সবুজ আলীর জানাজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ডিএমপির পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহতের স্মরণে দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে বিএনপি। নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে সতর্ক অবস্থানে থাকে পুলিশ ও পর্যাপ্ত তল্লাশীর ব্যবস্থা করা হয়। গায়েবানা জানাজা শেষে মিছিল আকারে বের হয়ে স্লোগান দিতে থাকে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেও ডিএমপির কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল করেছে শিয়া সম্প্রদায়। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধানমন্ডিতে গিয়ে শেষ হয়।
সূত্র-ডিএমপি নিউজ