সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তি আগামী বছর: কাদের

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এ বছর সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে এ বছর অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আগামী বছরের জুলাই থেকে এই স্কিমের কার্যকারিতা শুরু হবে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়েই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাপা প্রমুখ।
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালে অন্তর্ভুক্ত করার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা ভুল জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২০২৫ সালের ১ জুলাই শিক্ষকদের পেনশন স্কিমের কার্যকারিতা শুরু হবে। এর আগে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংসদে যে তথ্যটি দিয়েছিলেন, ২০২৪ সালে স্কিমটি শুরু হবে—এটা ভুল ছিল। সবার পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তি হবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে। এটা তাদের (শিক্ষকদের) পরিষ্কারভাবে বলেছি।’
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপার গ্রেড প্রদানের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের মর্যাদা ও লিখিত দাবিনামা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সমীপে উত্থাপন করব। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমরা আলাপ-আলোচনা করে নিব। আলাপ আলোচনা করে আশা করি, সমাধান আসবে।’
বৈঠকে শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শিক্ষকেরা বলেছেন, ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
এর আগে, বৈঠক শেষে বাংলাদেশ শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া সাংবাদিকদের জানান, আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে। আমরা আমাদের ফেডারেশনের সঙ্গে কথা পরে আমাদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
পেনশন স্কিম নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার কথা, সেটি কেন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে—এমন প্রশ্নের জবাবে নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী আমাদের নিয়ে বসেছেন।’
উল্লেখ্য, বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
শিক্ষক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতরুল ইসলাম, মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ঢাবির টেলিভিশন ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক এই কর্মবিরতি পালন করছেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্য দুটি দাবি হলো সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। দেশের ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন সাড়ে ১৬ হাজার, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৩৪ হাজার ৩৮২ জন।
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। বর্তমানে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় পাঁচটি কর্মসূচি (স্কিম) রয়েছে। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস, সমতা ও প্রত্যয়। এগুলোর মধ্যে প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো।