কোটা ইস্যুতে মুখোমুখি ছাত্রলীগ-ছাত্রদল
-2024-07-11-17-24-08.jpg)
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
সাদ্দাম বলেন, ‘যে বিষয়টি আইনিভাবে সমাধান হচ্ছে, আশ্বাসও মিলেছে। সেই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকে টেনে হিঁচড়ে লম্বা করা উচিত নয়। কোটার যৌক্তিক সংস্কার ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাধান ছাত্রলীগও চায়। তবে তা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, শহর অচল করে নয়।’
এটি এমন একটি আন্দোলন যে আন্দোলনের কোনো প্রতিপক্ষ নেই- এমন মন্তব্য করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন থেকে বিএনপি জামায়াত ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।
আজকে যারা আন্দোলন করছেন, তারা কি ছাত্রজীবী না আন্দোলনজীবী - এ প্রশ্ন তুলে সাদ্দাম বলেন, ‘যারা ছাত্র, আদালতের আদেশের পর তারা সরে এসেছেন। কিন্তু এখনও যারা আন্দোলন করতে চাচ্ছেন, তাদের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। এ আন্দোলনের কারণে জনগণের সমস্যা হচ্ছে, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে, রোগীদের হাসপাতালে যেতে সমস্যা হচ্ছে। আন্দোলন আন্দোলন খেলায় সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।’
এই আন্দোলনে ছাত্রলীগের সমর্থন আছে তবে তা জনগণকে কষ্ট দিয়ে নয় বলে জানান সাদ্দাম। পাশাপাশি মেধা ও কোটা বিপরীতধর্মী নয় বলেও মনে করে ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এখন কী চান?
অপরদিকে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোটাবিরোধী আন্দোলনে আগে থেকেই সমর্থন দিয়ে এসেছে। এবার ছাত্রদল বলছে নিয়েছে, এই কর্মসূচিতে সরাসরি যুক্ত আছেন তাদের কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলছেন, সরকারি চাকরিতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের স্বল্প কোটা ছাড়া অন্য সব কোটা বাতিল চান তারা।
ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও। তিনি অভিযোগ করেন, আদালতকে ব্যবহার করে সরকার আবারও কোটা বহালের ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, দেশে চলমান নানা অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয় থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতেই সরকার কোটা ইস্যুতে চক্রান্ত করছে।
এদিকে আদালতের স্থিতাবস্থার ফলে এই মুহূর্তে সরকারি চাকরিতে কোটা না থাকলেও নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে কোটা সংস্কার চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। তারা বলছেন, আদালতের মাধ্যমে কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্র বৈধ হয়ে কোটা বাতিল হলেও পরবর্তীতে সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ আইনের দ্বারস্থ হলে আবারো নতুন সমস্যার উদ্ভব হবে। ফলে সংসদে আইন করে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের সমাধান চাইছেন তারা।
আদালতের নির্দেশের পরও কেন কমিশন গঠন ও সংসদে আইনের মাধ্যমে সমাধান চাইছেন- এমন প্রশ্নে আন্দোলনকারীরা বলছেন, ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কেউ কিংবা প্রতিবন্ধী কেউ রিট করলে তখন পরিপত্র কিংবা আদালতের আদেশ বাতিল হতে পারে। তাই আদালতের আদেশে চূড়ান্ত সমাধান দেখছেন না তারা।
আরও পড়ুন: আপিল বিভাগের আদেশের পর কোটা আছে কি না?
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন,
২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্রে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীসহ যারা সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত তাদেরকে রাখা হয়নি। তারা যদি আবার তাদের অধিকার চেয়ে আদালতে রিট করে তাহলে তো এই পরিপত্র আবার বাতিল হয়ে যাবে। আমরা কি বার বার রাস্তায় নামবো? ছাত্রদের বার বার আদালতে নিয়ে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটা থেকে আমরা বের হতে চাচ্ছি। সেজন্যই আমরা বলছি, সংসদে আইন করার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান হোক।
এছাড়া কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য যে গবেষণা বা যাচাই-বাছাই প্রয়োজন তা নির্বাহী বিভাগকেই কমিশনের মাধ্যমে করতে হবে বলে দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করছেন, কমিশনের সুপারিশের আলোকে আইন পাস করাই কোটা সংস্কারের একমাত্র পথ।
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী বলেন,
আমদের দাবি হচ্ছে, এই সমস্যার সমাধান সংসদ থেকে আসুক। সংসদ একটি আইন পাশ করবে, একটি নীতিমালা গ্রহণ করবে- সেটা যেভাবেই করুক, কমিশন গঠন করে করুক বা সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে করুক।
আরও পড়ুন: ৫৬ শতাংশ কোটায় কার কত?
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘সর্ষের ভেতরেই ভুতটা থেকে গেছে! ফলে চূড়ান্ত ফয়সালা করতে হলে সেটা নির্বাহী বিভাগকেই করতে হবে। কোর্ট কিন্তু কখনো বলবে না যে, এই জনগোষ্ঠীকে এত শতাংশ কোটা দেয়া হোক বা ওই জনগোষ্ঠীকে এত শতাংশ দেয়া হোক। এটা কোর্টের এখতিয়ার না, সম্পূর্ণভাবে নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার।’
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ।
কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালতে হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর নেতারা। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন তারা।