নিয়ম না মানা ২০ হাজার ভবনের বিরুদ্ধে আসছে কঠোর পদক্ষেপ

নিয়ম না মানা বহুতল করা ২০ হাজার ভবনের বিরুদ্ধে আসছে কঠোর পদক্ষেপ। পূর্বের করা ঝুঁকিপূর্ণ এই তালিকায় উত্তরা থেকে পূরাণ ঢাকা, গাবতলী থেকে পোস্তগোলা থেকে শুরু করে অভিযাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী এবং ধানমন্ডি এলাকারও ভবন রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ঝূঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা মার্কেটের বিরুদ্ধেও নেয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ।
সবমিলিয়ে আসছে গ্রীস্মে অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকি কমাতে কঠোর হচ্ছে সরকার। রাজউক, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতিমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে নিমতলি ট্রাজেডির পর রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর করনীয় নিয়ে ১৭ দফা সুপালিম বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে অভিযাত রেষ্টুরেন্ট থাকা এক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নারী, শিশু, শিক্ষার্থী, প্রবাসী, আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এর পরপরই ফায়ার সার্ভিস থেকে ঘোষণা আসে এ ভবনকে বহু আগেই আগুনের ঝুঁকি থাকায় নোটিশ প্রদান করেছিল। কিন্তু তারা সেই নোটিশই আমলে নেয়নি। এরপর রাজউক থেকে ঘোষণা আসে সেখানে মার্কেট করার কোন অনুমোদন-ই ছিলনা।
ঘটনার পর পুলিশও সরব হয়। মামলা দায়ের করা হয়। আর এ মামলাতে ইতিমধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আগামি গ্রীস্মের আগেই অগ্নিকান্ড ঝুঁকি কমাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকেই সতর্ক থেকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এরপর থেকেই মূলত নড়ে চড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো।
রাজউক সূত্র জানায়, পূর্বের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ও নোটিশ দেয়া হয়েছে এমন ভবনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। ইতিমধ্যে পূর্বের নোটিশ জারি প্রায় ২০ হাজার ভবনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৈরী হচ্ছে রাজউক। রাজউকের সঙ্গে থাকবে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং ম্যাজিষ্ট্রেট। উত্তরা থেকে শুরু করে পূরাণ ঢাকা, গাবতলি থেকে পোস্তগোলা পুরো রাজধানী জুড়েই শুরু হচ্ছে এ অভিযান।
রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নোটিশ প্রদান করা ভবনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন শুরু করছি। যে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন আমরা ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের দূর্ঘটনা আর দেখতে চাইনা। কোন দূর্ঘটনা ঘটলে কোড না মানা বা ঝূঁকিপূর্ণ ছিল কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এ রকম কথা আর শুনতে চায়না।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন এ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রতিবছরই সার্ভে করি। অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে থাকা ভবন, মার্কেটের বিষয়ে সার্ভে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভবন মালিকদের নিকট সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। আর যখন দূর্ঘটনা ঘটে তখন সবাই এ বিষয় নিয়ে কথা বলে।
তিনি বলেন, আমরা প্রায় ২০ হাজার ভবনের ব্যপারে আপত্তি জানিয়ে রাজউক, সিটি কর্পোরেশনে প্রেরণ করা আছে। আগামি গ্রীস্মকালীন সময়ে অগ্নিকান্ড ঝুঁকি কমাতে হলে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় আগুনের ঘটনা ঘটলে সাধারণ বের হতে না হতে ঘটবে বড় ধরনের প্রাণহানীর ঘটনা। আর এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নামা হচ্ছে।
বাস্তবায়ন হয়নি সেই ১৭ সুপারিশ : ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ১২৪ জন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনার ১৭ দফা সুপারিশ করে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি। কিন্তু ১৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি সেসব সুপারিশ।
সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে- জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম বা কারখানা সরিয়ে নেয়া, অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া, রাসায়নিক দ্রব্যের মজুত, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া জোরদার করা, ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩’ ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুত বা বিপণনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্য বা বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ মজুতকরণ বা বিপণন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা, ঘরবাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারের গুণগত মান নিশ্চিত করা, রাস্তায় স্থাপিত খোলা তারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা পরিহার করতে প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা করা, দ্রুত অগ্নি নির্বাপণের জন্য স্থানীয়ভাবে পৃথক পানির লাইনসহ হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপন করা, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় জাতীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন, রাসায়নিক ও রাসায়নিক জাতীয় দাহ্য বস্তুর আলাদা দপ্তরের পরিবর্তে সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রভৃতি।
নতুনসময়/এএম
বহুতল, ভবন, কঠোর, পদক্ষেপ, ঝুঁকিপূর্ণ, মার্কেট, অগ্নিকাণ্ড, ঝুঁকি, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস