সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রেবেশের আশঙ্কা

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারনে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রেবেশের আশঙ্কা রয়েছে বলে সীমান্তের বসবাসকারী লোকজন জানিয়েছেন। এর মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এখানে উস্কানি হিসাবে কাজ করতে পারে বলে শঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, ‘সেখানে এক ধরনের নাশকতা হওয়ার আশঙ্কা আছে। কাজেই ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। মিয়ানমারে এই সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে নতুন করে আবারও রোহিঙ্গা আগমনের একটি শংকাও রয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে প্রাণ বাঁচাতে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এতে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অবস্থানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি।
মিয়ানমার অংশে অবস্থানরত স্বজনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির চক্রান্ত রুখে দিতে ক্যাম্পে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারে দেয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা।
বর্তমানে উখিয়ার কতুপালং হয়ে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আমর্ড পুলিশের স্বতন্ত্র তিনটি ব্যাটেলিয়ন। একই সাথে একাধিক আনসার ক্যাম্প। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আর্মড পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে টহলও দিচ্ছে তারা। উখিয়ার পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমার আরকান রাজ্য সংঘাতের কারনে এদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রেবেশ ঘটে। এরপর থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে উখিয়া- টেকনাফের আশ্রয় নেয়।তারা ক্যাম্পে আশ্রয়ের পর রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ ক্যাম্পে শুরু করেন দেয় গোলাগুলি ও খুন, অপহরণ,মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি।
এ কারনে স্থানীয়রা এক ধরনে অনিরাপদের মধ্যে বসবাস করছে। এবারো মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলমান রয়েছে।এ কারনে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রেবেশের আশঙ্কা রয়েছে। সে সাথে বিদ্রোহীরাও ডুকে যেতে পারে। তবে আমরা স্থানীয়রা সহ বিজিবি'র সদস্যরা সর্তক অবস্থানে রয়েছেন বলে তিনি জানায়।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের থেমে থেমে চলছে গোলাগুলি। এ গোলাগুলির শব্দে এপারের বাসিন্দের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
এ ঘটনায় শনিবার ২৭ জানুয়ারী উলুবনিয়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের বসতঘরে ওপার থেকে এসে একটি গুলি পড়ে, সে সাথে সীমান্তের পাশে চাষের জমিতে পড়লো মর্টারশেল। দিবাগত রাত মঙ্গলবারেও শোনা গেছে ফায়ারের শব্দ এবং মঙ্গলবার দুপুরে দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে সীমান্তের কাছে ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখা গেলো।
উলুবনিয়া জামান সখিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ শ্রেনীর শিক্ষার্থী আফরোজা খানম রাহি বলেন, আমার বাড়ি উলুবনিয়া গ্রামের সীমান্তের কাছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমান্তের কাছে গুলি'র শব্দ হলে ভয়ে স্কুলে যেতে পারিনা। পড়াশোনা করতে পারিনা।
এদিকে কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি'র) অধিনায়ক কর্নেল মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরী গত ২৮ জানুয়ারী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি'র মাধ্যমে জানিয়েছিল সাম্প্রতিক মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মিয়ানমার আর্মি/বিজিপি এবং আরাকান আর্মি'র মধ্যকার চলমান সংঘর্ষের জের ধরে গত ২৭ জানুয়ারি মিয়ানমার হতে ফায়ারকৃত ১৩টি মর্টার শেল এবং ১ রাউন্ড বুলেট কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে।
উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিজিবি'র পক্ষ হতে তাৎক্ষণিক প্রতিপক্ষ বিজিপিকে প্রতিবাদ লিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি'র) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তের ওপারে সংঘাত চলার কারনে রোহিঙ্গা অনুপ্রেবেশের আশঙ্কা থাকতে পারে। তবে সীমান্তে আমাদের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রয়েছে।এখন পর্যন্ত কোন রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেনি। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটা জাতীয় ইস্যু। সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থায় রয়েছে।