তফসিল ঘোষণা ঘিরে সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তা

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঘিরে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচন কমিশন থেকে তফসিল দেওয়ার পর কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, তফসিলের পর কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও নাশকতা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে নাশকতাকারীদের ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে।
আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, নানা দাবিতে বর্তমানে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি বিরোধী দল অবরোধ কর্মসূচির নামে বিচ্ছিন্নভাবে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করছে। কোথাও কোথাও ককটেল নিক্ষেপের মতো ঘটনাও ঘটছে। এ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বাড়তে পারে। সেজন্য পুলিশের আগাম সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় সতর্ক থাকে। তফসিল ঘিরে যদি কেউ জানমাল ও সম্পদের ক্ষতি করতে চায় বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, তফসিলের পর জ্বালাও-পোড়াও হতে পারে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ছক করা হয়েছে। নাশকতার সঙ্গে যারা জড়িত বা যুক্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের ওপর নজরদারি চলছে। থানা পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন সমন্বয় করে তাদের আইনের আওতায় নিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে আগামী দিনগুলোতে সম্ভাব্য সহিংসতা ও নাশকতা এড়াতে ডিএমপির সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি সদর দপ্তরে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান এ নির্দেশনা দেন। এতে তফসিল ঘোষণার পর সহিংসতার সম্ভাব্য বৃদ্ধি মোকাবিলায় বর্ধিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, টহল বৃদ্ধি এবং বর্ধিত সতর্কতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেওয়া ডিএমপির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠক থেকে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২৪ ঘণ্টা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে ২৮ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা নিয়েও আলোচনা হয়। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা জানান, তফসিল ঘোষণার পর রাজধানীতে দিনের পাশাপাশি রাতেও টহল বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। রাতে পুলিশকে জোরে সাইরেন এবং বাঁশি বাজানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের ২৪ ঘণ্টা সতর্ক সম্ভাব্য যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার পর নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ওপরে ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে নাইটভিশন সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হবে। রাজধানীর ভেতরে এবং রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তফসিল ঘোষণা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি তৎপরতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, এ নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যে সভা হয়েছে, তাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা রয়েছে। তারা সবকিছু দেখবে।