হেফাজতিদের অ্যাকাউন্টে শতকোটি টাকার সন্ধান

সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লালসা থেকে টাকার পাহাড় গড়েছে হেফাজতে ইসলাম। দেশ বিদেশের গোপন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয় বিপুল তহবিল। শতকোটি টাকার সন্ধান মিলেছে হেফাজতিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
অনুদানের টাকা যাচ্ছে নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে। কাড়ি কাড়ি টাকায় বিলাসি জীবনযাপন করছেন তারা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিপুল বিনিয়োগ সংগঠনটির।
হেফাজতে ইসলাম, গেলো আট বছরে শক্তি দেখায় কয়েক বার। রাজনৈতিক হিসাব নিকাশে গুরুত্ব পায় ক্ষমতাসীনদের কাছে। গোপনে গোপনে অর্থনৈতিক শক্তিও বাড়াতে থাকে সংগঠনটি।
নেতাদের বিলাসি জীবন চোখ এড়ায়নি। সন্দেহ বাড়ে গোয়েন্দাদের। তাদের প্রশ্ন, দেশব্যাপী কর্মকান্ড চালাতে টাকা আসে কোথা থেকে? কী তাদের আর্থিক বুনিয়াদ? নমুনা হিসেবে প্রথম দফায় ৫৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে নজর।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন ধর্মীয় দুর্বলতাকে পুঁজি করে দেশ বিদেশের অনুদান, গোপন তহবিল মৌলবাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এলো সাপ, ১০ কোটি, ২০ কোটি টাকা নয়। একশো কোটি টাকা তাদের ব্যাংকে। সংগঠনটির বিপুল অর্থ খরচ হয় সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে।
বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট আবু প্রধান হেনা মো. রাজী হাসান বলেন, শতকোটি টাকার পাল্লা, সমান তালে রয়েছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবে। ১৯ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেদের হিসাব বড় করেছেন ৩৫ হেফাজত ও সমমনা নেতা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মৌলবাদের বড় অর্থনীতি, বাড়াচ্ছে সসিংসতা ও সন্ত্রাসি কর্মকান্ড। যা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চাপ।
এদিকে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, সাবেক মহাসচিব প্রয়াত নূর হুসাইন কাসেমী এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ২৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে ৩০টি মাদরাসার ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়।
সরকারের একটি সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসব হিসাব তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআইইউর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশজুড়ে হেফাজতকর্মীদের সহিংসতায় ১৩ জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ আহত হয়। এর পরই সরকারি একটি সংস্থার নির্দেশে বিএফআইইউ এসব নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করে। সংশ্লিষ্ট হেফাজত নেতা ও মাদরাসাগুলোর অর্থের উৎস কী, তা জানার জন্যই এসব হিসাব তলবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যাংক হিসাব তলব করা নেতাদের মধ্যে আরো রয়েছেন হেফাজতের সহসভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাইল করীম, মহাসচিব সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল-হাইয়্যাতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ ইমাম ও মুসল্লি ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব (ডেমরা) মাওলানা মাহমুদুল হাসান সিরাজী ও মাওলানা আব্দুল আলিম সাইফি (কদমতলী), মাওলানা আব্দুল হক (শ্যামপুর), হেফাজতে ইসলামের অর্থ সম্পাদক মুফতি মুরি হোসাইন কাসেমী, দারুল আরকাম মাদরাসার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালক আল্লামা সাজিদুর রহমান, জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালক আল্লামা মুফতি মোবারক উল্লাহ, ইসলামপুর মাদরাসার পরিচালক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মাওলানা মো. বোরহান উদ্দিন কাশেমী, জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শিক্ষাসচিব আল্লামা আশেক এলাহী, সৈয়দুন্নেছা মাদরাসার (কাজিপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালক মাওলানা হাফেজ ইদ্রিস, অষ্টগ্রাম বাজার মাদরাসার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালক মাওলানা বোরহান উদ্দিন, বেড়তলা মাদরাসার (আশুগঞ্জ) পরিচালক হাফেজ জোবায়ের আহাম্মদ আনসারী, সরাইল উচালিয়া মাদরাসার (সরাইল) পরিচালক মাওলানা মো. জহিরুল ইসলাম, দারমা মাদরাসার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালক মাওলানা মেরাজুল হক কাশেমী, নাটাই দক্ষিণ বিরাসার মাদরাসার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালক মাওলানা মো. আবু তাহের এবং জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ছাত্র/সভাপতি মাওলানা মো. জিয়া উদ্দিন জিয়া।
যেসব মাদরাসার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে সেগুলো হলো সানারপাড়ের নিমাই কাশারীর জামিয়াতুল আবরার হাফিজিয়া মাদরাসা, সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগরের মা. হাদুশ শাইখ ইদরীম আর ইসলামী ও আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা, সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের আশরাফিয়া মহিলা মাদরাসা, আব্দুল আলী দারুস সালাম হিফজুল কোরআন মাদরাসা ও ইফয়জুল উলুম মুহডিচ্ছুন্নাহ আরাবিয়্যাহ মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া নূরুল কোরআন মাদরাসা, ভূইয়াপাড়া জামিয়া মুহাম্মদীয়া মাদরাসা, মারকাজুল তাহরিকে খতমি নবুওয়াত কারামাতিয়া মাতালাউল উলুম মাদরাসা, নূরে মদিনা দাখিল মাদরাসা ও জামিয়াতুল ইব্রাহীম মাদরাসা, হাটহাজারীর জামিয়া আহদিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসা, মেখল হাটহাজারীর জামিয়া ইসলামিয়া হামিউস সুন্নাহ মাদরাসা, চারিয়া হাটহাজারীর জামিয়া ইসলামিয়া ক্বাসেমুল উলুম মাদরাসা, ফতেহপুর হাটহাজারীর জামিয়া হামিদিয়া নাছেরুল ইসলাম মাদরাসা ও মাহমুদিয়া মদিনাতুল উলুম মাদরাসা, ফটিকছড়ির বাবুনগর আজিজুল উলুম মাদরাসা, আল-জামিয়াতুল কোরআনিয়া তালিমুদ্দিন হেফজখানা ও এতিমখানা, নাজিরহাট আল জামেয়াতুল আরাবিয়া নাসিরুল ইসলাম মাদরাসা এবং জাফতনগর হাফেজুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানা, উত্তর নিশ্চিন্তপুরের তালীমুল কুরআন বালক-বালিকা মাদরাসা ও এতিমখানা, চট্টগ্রামের পটিয়ার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া মাদরাসা, হাফেজিয়া তালীমুল কোরান মাদরাসা ও এতিমখানা এবং আশিয়া এমদাদুল উলুম মাদরাসা হেফজখানা ও এতিমখানা; চট্টগ্রামের ভুজপুরের উত্তর বারমাসিয়া হাফেজুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা, দাঁতমারা তালিমুল কোরআন ইসলামিয়া মাদরাসা, আল জামিয়া ইসলামিয়া এমদাদুল ইসলাম মাদরাসা, আল মাহমুদ ইসলামিয়া বালক-বালিকা মাদরাসা, আল মাদরাসাতুল ইসলামিয়া আল আরাবিয়া হেফজখানা ও এতিমখানা বালক-বালিকা মাদরাসা এবং চট্টগ্রামের বেতুয়ার সিরাজুল উলুম মাদরাসা।
এ সকল ব্যক্তি ও মাদ্রাসার অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি রয়েছে। তবে এসব টাকা কোথায় থেকে এসেছে কারা দিয়েছে এসব বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।