ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে জুলাই ২০২৫, ৯ই শ্রাবণ ১৪৩২


ভারি অস্ত্রে নিরাপত্তা চৌকি বসছে থানায় 


৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৩

সংগৃহিত

দেশের গুরুত্বপূর্ণ সকল থানায় বসছে নিরাপত্তা চৌকি। আর আসেব চৌকিতে ভারি অস্ত্রও থাকছে। সার্বক্ষনিক পুলিশ সদস্যরা এ সকল নিরাপত্তা চৌকিতে দ্বায়িত্বপালন করবেন। কোন অপ্রিতিকর ঘটনায় থানায় আক্রমন করতে গেলে সেখান থেকেই প্রতিহত করা হবে।

পুলিশের উর্ধ্বদন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি হেফাজত ইসলাম কয়েকটি ইস্যু নিয়ে দেশের কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালায়। এসব ঘটনায় থানা আক্রমনও বাদ যায়নি। বিশেষ করে চট্রগ্রামের হাটহাজারী থানা আক্রমন দিয়ে শুরু হয়। সর্বশেষ ফরিদপুরের সালথা থানাও আক্রমনের শিকার হয়। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পুলিশের প্রধান ড. বেনজির আহমেদ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন রাবার বুলেটে কাজ না হলে ভারি অস্ত্র চালাতে।

নারায়ণগঞ্জের ৭ থানা ও ৮ ফাঁড়িতে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি : নারায়ণগঞ্জ জেলার সাত থানা ও আট ফাঁড়িতে এলএমজি বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। বুধবার রাত থেকে থানায় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে গুরুত্ব অনুসারে থানা, ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্রে এলএমজি পোস্ট ও সিমেন্টের বস্তা দিয়ে বিশেষ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা। এসব চৌকিতে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার ছাদের ওপর গোলঘরে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চৌকি। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের এক সদস্য এলএমজি তাক করে বসে আছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় জেলার ৭টি থানা ও ৮টি ফাঁড়িতে ওই বিশেষ চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে পুলিশের আওতাধীন সব থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে এলএমজি পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

সিলেটে থানায় থানায় মেশিনগান হাতে পাহারা : সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) সকল থানা ও ফাঁড়িতে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেই সাথে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। এসব চৌকিতে হালকা মেশিনগান (এলএমজি) নিয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন থানার নিরাপত্তাকর্মীরা। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রতিটি থানার সামনে বালু ও মাটির আড়াল তৈরি করে নির্মাণ করা হয়েছে এই এলএমজি পোস্ট। সেই সঙ্গে ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিটি থানায় ৩০ থেকে ৫০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

হামলাসহ যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন জানান, ফরিদপুরের সালথাসহ কয়েকটি থানায় হামলার ঘটনার পর সারাদেশের সব থানাকে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর বুধবার (৭ এপ্রিল) সিলেট জেলা পুলিশ লাইনসে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয়ের উপস্থিতিতে সিলেট জেলার সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নিয়ে একটি বৈঠক করি আমরা। ওই বৈঠকে জেলার সব থানায় বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এলএমজি চৌকি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি জানান, বুধবার রাত থেকেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্রবাদী গোষ্ঠী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা। ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদ নষ্ট করেছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) এবিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, এসএমপি’র সব থানা, ফাঁড়ি ও স্থাপনায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি স্থাপনায় এলএমজি পোস্ট বসানো হয়েছে। শুধু থানা আর ফাঁড়ি নয়, সরকারি সব স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ফোর্স তৈরি রাখা হয়েছে।

সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, সিলেট জেলার আওতাধীন প্রতিটি থানায় সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এলএমজি পোস্ট বসানো হয়েছে। থানাগুলোতে এলএমজি সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় প্রতিটি থানায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

রাবার বুলেটে নিয়ন্ত্রন না হলে ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র চালানোর নির্দেশ : সহিংসতা ঠেকাতে কোথাও পুলিশের ত্রুটি বা ঘাটতি ছিল কি না, তা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন আইজিপি। পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন

কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, ভূমি অফিস, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এমনকি পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন।

এসব ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, রাবার বুলেটে সহিংসতা দমানো না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র চালাতে হবে। একই সঙ্গে পুলিশকে মনোবল শক্ত রাখারও তাগিদ দেন তিনি।