১৫ জুন দেশে আসছে প্রথম মেট্রো ট্রেন, ধারণা দেবে মকআপ ট্রেন
-2020-03-20-19-10-44.jpg)
আগামী ১৫ জুন প্রথম মেট্রো ট্রেনটি জাপান থেকে দেশে আসছে। আর রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলছে মেট্রোরেলের ট্র্যাক নির্মাণ কাজ। এ কাজ শেষে তাতে জাপান থেকে আসা তৈরি ট্রেন কোচগুলো বসিয়ে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হবে। এসব কাজ শেষ করতে অবশ্য লাগবে আরও দেড় বছর।
আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেলের উদ্বোধন করা হবে। ওইদিনই যানজটের নগরীতে চলতে শুরু করবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
মুজিব শতবর্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাপানে বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের ‘ফ্যাক্টরি ট্রায়াল রান’ বা পরীক্ষামূলক পরিচালনা সম্পন্ন হয়েছে গত বুধবার (১৮ মার্চ) রাতে। দেশটির কারখানায় এটি পরিচালনা করে দেখা হয়। এরপর রাতেই মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলের ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাপানে বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের ফ্যাক্টরি ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ছয়টি কোচ সম্বলিত মেট্রোরেল স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। এতে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের প্রাধান্য রয়েছে। ট্রেনটির সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা দুই হাজার ৩০৮ জন। লাল সবুজের ট্রেনটি কারখানার ভেতরে আস্তে আস্তে চালানো হচ্ছে। এতে ট্রেনের বাইরের অংশ ভালো করে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমআরটিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু আমরা আগামী বছরের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। সে অনুসারেই আমরা কাজ করছি। আমাদের দেশের পাশাপাশি জাপানেও এর কাজ চলছে। আমাদের যে টার্গেট সে অনুসারে আমরা তাদের ওয়ার্ক প্ল্যান দিয়েছি। সে অনুযায়ী তারা কাজ করছেন। কয়েকটি কোচের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন সেখানে ট্রায়াল চলছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম মেট্রোরেলের কোচগুলো সরবরাহ করবে। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ লাল-সবুজের আদলে কোচ প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির নির্ধারিত কারখানায় ৬টি কোচ প্রস্তুত শেষে এখন ট্রায়াল দিচ্ছে।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ-৮ (রোলিং স্টক রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ)–এর আওতায় জাপানে বগি নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। মেট্রোরেল সম্পর্কে জনগণকে সম্যক ধারণা দিতে ও বিভিন্ন তথ্য জানাতে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নমুনা ট্রেনটি বা মকআপ ট্রেন আনা হয়েছে। এজন্য উত্তরা দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপো এলাকায় মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। চলতি মার্চ মাসেই এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
আগামী ১৫ জুন মেট্রো ট্রেনের প্রথম সেটটি জাপান থেকে দেশে পৌঁছানোর পর ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট ও ট্রায়াল রান শুরু করা হবে। অন্যদিকে মকআপ ট্র্রেনটির মাধ্যমে মেট্রোরেলের টিকিট কাটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ানো, নামা, ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনের নির্দেশিকাগুলো কেমন থাকবে-এসব বিষয়ে মানুষকে ধারণা দেয়া হবে। এই ট্রেনে কোনো যাত্রী বহন করা হবে না।
ডিএমআরটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক আরও বলেন, মেট্রোরেল সম্পর্কে ঢাকাবাসীকে ধারণা দিতে জাপান থেকে নমুনা কোচটি (মকআপ) আনা হয়েছে। মার্চেই এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। এটি যাত্রী পরিবহনের জন্য নয়। বাংলাদেশে এর আগে মেট্রোরেল ছিল না, মানুষকে ধারণা দিতেই এটা আমরা ডিপোতে বসাবো।
প্রকল্প সূত্র জানায়, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পর বর্তমানে কমলাপুর পর্যন্ত আরও ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলছে আর কমলাপুর অংশের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। প্রকল্পের আয়তন বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। নির্ধারিত ব্যয়েই বর্ধিত অংশের কাজ শেষ করা হবে।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেলপাত বসানোর কাজ চলছে। এমআরটি-৬ প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজে ভাগ করে পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ নম্বর প্যাকেজের আওতায় দিয়াবাড়ী এলাকায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ করা হচ্ছে প্যাকেজ-২ এর আওতায়। এর মধ্যে ডিপোতে ট্রেন রাখার স্থান, ট্রেন মেরামত ও মালামালের গুদাম, প্রধান ওয়ার্কশপসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) এবং ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে ৩ ও ৪ প্যাকেজে। আগারগাঁও থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ ৫-এর আওতায়। এ অংশের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট। কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ ৬-এর আওতায়। এছাড়া মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ পরিচালনা ও যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্যাকেজ ৭-এর আওতায়। রেলের কোচ এবং ডিপোর যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্যাকেজ ৮-এর অধীনে।
বর্ধিত অংশসহ দিয়াবাড়ী-কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের পুরো অংশই ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর খুলে দেয়া হবে বলেও জানান ডিএমআরটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক।
তিনি জানান, একটি ট্রেনে ৬টি করে কোচ থাকবে। প্রতি ৪ মিনিট পর পর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট।
নতুন সময়/এআর