ঢাকা সিটি নির্বাচন: ভোট নিয়ে যা ঘটছে

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন ( ইসি)। অন্যদিকে সিটি ভেটের তারিখ বদলানোর আবেদন ও খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। ভোটের তারিখ নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিনভর ছিল উত্তেজনা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকে শাহবাগ মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন এবং সরস্বতীপূজা। পূজার দিনে ভোটের তারিখ পড়ায় তা পেছানোর দাবি তুলেন শিক্ষার্থীরা।সরস্বতীপূজার কারণে নির্বাচন পেছানোর জন্য হাইকোর্টে একটি রিট করেন সুপ্রিম কোটের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। শুনানি শেষে মঙ্গলবার রিটটি খারিজ করে দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ। আদালত বলেছেন, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনী কার্যক্রম এখন যে অবস্থায় আছে, ভোটের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই নির্বাচন পেছাতে যে রিট করা হয়েছে, তা সরাসরি খারিজ করা হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল সংসদ দুপুরেই তারিখ পেছানোর দাবিতে মিছিল করে। তবে রিট খারিজের খবরে তাদের সঙ্গে আরও শিক্ষার্থী যুক্ত হয়ে শাহবাগে বিক্ষোভ করছেন। বরুণ সাহা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সরস্বতীপূজা সর্বজনীন উৎসব। এটা হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর ভোটকেন্দ্রগুলোও পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ধর্মীয় উৎসবের দিনে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা ভবিষ্যতের জন্য বাজে উদাহরণ হয়ে থাকবে। নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছেন ‘৩০ তারিখের নির্বাচন মানি না মানব না’, ‘পূজার দিনে নির্বাচন মানি না মানব না’। শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্বাচনের কমিশনের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের এটা করা ঠিক হয়নি। তাঁরা জানান, দাবি না মানা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ১১ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল।
মঙ্গরবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসব কক্ষে সরস্বতী পূজা হবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্য কক্ষগুলোতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
সিনিয়র সচিব বলেন, তাত্ত্বিক দিক থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূজা হওয়ার কথা থাকলেও কিন্তু হয় না। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হবে, সেখানে তারা পূজা করবেন। তাদের জন্য আলাদা জায়গা থাকবে। পূজার জায়গাগুলোকে ছেড়ে দিয়েই বাকি রুমগুলোতে ভোট হবে। যেখানে পূজা হবে সেই কক্ষ বাদ দিয়ে অন্য কক্ষগুলোতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। পূজার জায়গায় পূজা চলবে, নির্বাচনের জায়গায় নির্বাচন চলবে।
এদিকে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগের সময় ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনে জয়ী হলে মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন ।
আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি সফল হই আপনাদের ভোটে এবং আমার কাউন্সিলররা যদি ভোটে নির্বাচিত হয় তাহলে আমি এবং আমার কাউন্সিলররা প্রতি বছর সম্পদের হিসাব দেবো। জনবিচ্ছিন্ন যেন না হয়ে যাই সেটি নিশ্চিত করবো। একই সঙ্গে আমরা চেষ্টা করবো, প্রতি ওয়ার্ডে মাসে একটি করে সিটি হল মিটিং করার জন্য। সেটি হবে জবাবদিহিতার মিটিং। জনগণের মুখোমুখি হবে মেয়র নিজে এবং ওই এলাকার কাউন্সিলররা।
এর মাধ্যমে ওই ওয়ার্ডের সমস্যার কথা উঠে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন আতিক। একই সঙ্গে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধানও হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মোহাম্মদপুরের একটি সড়কের উদাহরণ দিয়ে আতিক বলেন, সেখানে একটি প্যাসেজ হচ্ছে। নাম শুনলে খারাপ লাগবে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার নাম ‘মেথর’। আমি বলেছিলাম মেথর প্যাসেজকে আমরা সার্ভিস প্যাসেজে রূপান্তর করব। আর কোনো মেথর প্যাসেজ আমরা চাই না। আমি মেয়র থাকার সময় এর কাজ কিন্তু শুরু করেছিলাম। আসুন আমরা সবাই মিলে সুস্থ ঢাকা গড়ে তুলি।
অন্রদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। মঙ্গলবার উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেমের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মেয়র নির্বাচিত হলে বছরের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ নাগরিকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। মঙ্গলবার কামরাঙ্গীচরের ঝাউচর এলাকায় দিনের প্রচার শুরুর সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তাপস বলেন, নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বছরের প্রতিটি ক্ষণ নগরবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখব। আমি নির্বাচিত হতে পারলে আগামী ৫ বছরে বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের ৭ দিন, দিনের ২৪ ঘণ্টার ৩৬০০ সেকেন্ড আপনাদের জন্য নিবেদিত করব। জনগণের সেবায় নিয়োজিত করব এবং নগর ভবনের দরজা সকলের জন্য খোলা থাকবে। তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ‘ব্যাপকভাবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলছে’ জানিয়ে নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ের আশা প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
অন্যদিকে প্রতিকার না পাওয়ায়’ নির্বাচন কমিশনে আর অভিযোগ না দিয়ে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
মঙ্গলবার পঞ্চম দিনের প্রচারে নেমে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, পোস্টার লাগাতে গেলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন নির্বিকার। এখন থেকে আর কোনো অভিযোগ আমরা দেব না। এখন থেকে বাধা এলেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলে আমরা এগিয়ে যাব।
এদিন খিলগাঁওয়ের ত্রিমোহনী বাজার থেকে প্রচার শুরু করেন ইশরাক। সবুজবাগ ও মুগদার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান তিনি।
নতুনসময়/আইকে