ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৩রা জুলাই ২০২৫, ২০শে আষাঢ় ১৪৩২


রাজউক এলাকায় আর বহুতল ভবন নয়


২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:৫৮

রাজধানীর ৩০ স্পট ছাড়া আর কোথাও বহুতল ভবন করা যাবে না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) খসড়া ডিটেইল অ্যারিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এমন বিধান রাখা হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই খসড়া ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সংশোধিত ড্যাপের সুপারিশে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ দশতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে। রাজউকের বিভিন্ন জোনে ৮ তলা পর্যন্ত অনুমোদনের বিধান রাখা হয়েছে।

একই সঙ্গে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে আরও দুই তলা বেশি নির্মাণ করা যাবে। এর চেয়ে বেশি উচ্চতাসম্পন্ন কোনো আবাসিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেবে না রাজউক। জনঘনত্ব কমিয়ে ঢাকাকে বাসযোগ্য করার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

তবে মেট্রোরেল স্টেশন, ব্লকবেইজ ডেভেলপমেন্ট, টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ থাকছে। রাজউকের আওতাধীন ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে এমন স্পট হতে পারে সর্বোচ্চ ৩০টি।

তবে রাজধানীর ভেতর স্পটগুলো ইতিমধ্যে ডেভেলপ সে কারণে শহরের ভেতরে নতুন করে কিছু করার সুযোগ থাকছে না। শহরের বাইরের স্পটগুলোতে নতুন করে ডেভেলপ করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরের জনঘনত্ব বেড়ে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে না আনলে এ শহর আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং পুরোপুরি বাসযোগ্যতা হারাবে। সে কারণে সংশোধিত ড্যাপে রাজউকের জনঘনত্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’

তিনি বলেন, ‘ডেনসিটি জোনিং (জনঘনত্ব) এবং হাইড্রো জোনিং (উচ্চতা) রাজউকের সংশোধিত ড্যাপের খুবই ইতিবাচক দিক। এটা চূড়ান্ত হলে গেজেট আকার প্রকাশের পর বাস্তবায়ন করা হলে বাসযোগ্যতা হারানোর পথে ছুটে চলা ঢাকাকে অনেকাংশে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

এ প্রসঙ্গে রাজউকের ডিটেইল্ড অ্যারিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা শহরকে বিদ্যমান অবস্থায় আর চলতে দেয়া যায় না। এজন্য সংশোধিত ড্যাপে শহরের জনঘনত্ব কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালার ন্যায় যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘মেট্রো স্ট্রেশন, ব্লক বেইজ ডেভেলপমেন্ট, টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রিডেভেলপমেন্ট ও বাণিজ্যিক জোনের ক্ষেত্রে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়ার বিধান রাখা হচ্ছে। অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে সংশোধিত ড্যাপে বিধানাবলি প্রণয়ন করা হয়েছে। সেহেতু ড্যাপের বিধানাবলি এই শহর ও মানুষের জন্য ইতিবাচক হবে এ ব্যাপারে নগরবাসীকে আস্থা রাখতে অনুরোধ জানাব।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্যাপ আওতাভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৮ তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার জন্য সর্বোচ্চ ৮ তলা উচ্চতার ভবন অনুমোদনের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও সাভার পৌরসভার জন্য সর্বোচ্চ ৬ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে।

তারা আরও জানান, এর মধ্যে কোনো ভবন মালিক যদি তার ভবনের একটি ফ্লোর স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য বরাদ্দ রাখেন তবে নির্দিষ্ট উচ্চতার চেয়ে আরও এক তলা বেশি নির্মাণের অনুমতি দেবে রাজউক।

এছাড়া ড্যাপের প্রস্তাবিত মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো এলাকায় বেশিসংখ্যক স্কুল থাকলে সেসব ভবনে নির্ধারিত উচ্চতার চেয়ে একতলা বেশি অনুমোদন দেয়া হবে। অর্থাৎ পরিকল্পনার চেয়ে বেশি স্কুল আছে এমন এলাকার কোনো প্লট মালিক তার ভবনের একটি ফ্লোর নিম্নমধ্যবিত্তদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ করলে অতিরিক্ত দুইতলা নির্মাণের অনুমতি পাবেন।

ড্যাপ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা মহানগরে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ কার্যকর হওয়ার পর থেকে রাজউক সীমানাধীন বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের জনঘনত্বের নাজুক পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করে।

সর্বত্রই ফ্লোর অ্যারিয়া অনুপাতের ধারণা দেয়া হয়েছে। এলাকাভিত্তিক ভিন্নতার বিষয়টি বিবেচনায়ই নেয়া হয়নি। একটি প্লটে ভবনের উচ্চতা এবং আবাসের একককে শুধু বৃদ্ধিই করা হয়েছে।

অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, একই প্লটে আটতলা উচ্চতাবিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করা সম্ভব। ফলে রাজউক সীমানার ভেতরে বহুতলবিশিষ্ট ভবনগুলো পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সরু সড়কে বহুতল ভবন তৈরি করলে ওইসব এলাকার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে।

এছাড়া পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপরও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন- বায়ু চলাচল ও সূর্যের আলোর পরিমাণও কমে যায়। সেসব দিক বিবেচনা করে, রাজউক সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (২০১৬-২০৩৫) আওতায় ঢাকা কেন্দ্রীয় এলাকায় জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ কমাতে, বিভিন্ন এলাকায় সুষম উন্নয়নে সহায়তা করতে এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র মেট্রোপলিটন এলাকাকে বাসযোগ্য এবং পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ডেনসিটি জোনিং (জনঘনত্ব) এবং হাইড্রো জোনিং (উচ্চতা) সম্পর্কিত বিধানাবলি প্রণয়ন করা হয়েছে।

খসড়া ডিটেইল অ্যারিয়া প্ল্যানে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ আটতলা ভবন নির্মাণ করা যাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি এলাকায়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ব্লক, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর ব্লক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর ব্লক, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক নির্দিষ্ট উচ্চতায় ভবন নির্মাণ করতে পারবে।

আর সর্বোচ্চ সাততলা ভবন নির্মাণ করা যাবে- ঢাকা উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর ব্লক, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ২, ৪ নম্বর ব্লক, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ৩ নম্বর ব্লক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ২, ৩ নম্বর স্লক ও ১৮ ওয়ার্ডের এক নম্বর ব্লক।

এছাড়া ছয়তলা ভবনের অনুমতি দেয়া হচ্ছে, ঢাকা উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭ নম্বর ব্লক, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ২ নম্বর ব্লক, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২, ৩ নম্বর ব্লক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর ব্লক, ১৮ নম্বর ৬ নম্বর ব্লক, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩, ৫ নম্বর ব্লক, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর ব্লক, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ২ নম্বর ব্লক, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর ব্লক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ২ নম্বর ব্লক, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর ব্লক, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্ব ব্লক, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ২ নম্বর ব্লক, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ২, ৩ নম্বর ব্লক, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর ব্লক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লক, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর ব্লক এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ ওয়ার্ড ৪ ও পাঁচতলা হিসেবে দেখানো হয়েছে সংশোধিত ড্যাপের খসড়া প্রতিবেদনে।

নতুনসময়/আইকে