ঢাকা শুক্রবার, ৪ঠা জুলাই ২০২৫, ২০শে আষাঢ় ১৪৩২


সব বিভাগে হাইকোর্ট বেঞ্চ, ভুক্তভোগীর মতামতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ঐকমত্য


৩ জুলাই ২০২৫ ২১:১৯

সংগৃহীত

দণ্ডিত ব্যক্তিকে ক্ষমা করার রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রয়োগে যে বিধান রয়েছে- তা সংশোধন করে ভুক্তভোগী পরিবারের মতামত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে সব রাজনৈতিক দল। এছাড়া সব বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নবম দিনের আলোচনা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। 

 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজকের আলোচনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন সম্পর্কিত বিধান এবং বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

 

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিগত সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের ৪৯নং অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছে।

 

কমিশনের সহ-সভাপতি জানান, সংবিধানের ৪৯নং অনুচ্ছেদ সংশোধন বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে তা হলো- ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণক্রমে উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করা হইবে।’

 

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সংবিধানের ৪৯নং অনুচ্ছেদ সংশোধন বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন থেকে দেওয়া প্রস্তাবের আলোকে যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে- তা ভবিষ্যতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এতদিন ধরে এই ক্ষমতার যে অপব্যবহার হয়েছে- তা বন্ধ হবে।

 

বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কিত বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে- তা উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে। তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে যে সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন, তার পরিবর্তে রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। এর মাধ্যমে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।

 

এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের ১০০নং অনুচ্ছেদের পরিবর্তন হবে বলে জানান তিনি।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সমূহের বিষয়ে ঐক্য গড়ে এবং রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরীর লক্ষ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) দ্বিতীয় দফায় নবম দিনের মতো দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

 

কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ৭ জুলাই পুনরায় আলোচনার দিন ধার্য করা হয়েছে।

 

এ পর্যন্ত সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান এবং বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।