ঢাকা মঙ্গলবার, ১লা জুলাই ২০২৫, ১৮ই আষাঢ় ১৪৩২


আবরার হত্যায় আসামি কার কী দায়


১৪ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:৪৫

ছবি সংগৃহীত

আবরার হত্যায় ২৫ আসামির কার কী দায়বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বি হত্যাকাণ্ডে ২৫ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদের মধ্যে মারধর করেছে ১১ জন। তাদের কয়েকজনসহ মোট ১৭ জন হত্যাকাণ্ডের আগে শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিন ও গেস্টরুমে পৃথক দুটি মিটিংয়ে অংশ নেন। তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, যাদের পরবর্তীতে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ডিবির পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বুধবার (১৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযুক্তদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া পলাতক রয়েছে ৪ জন। এর মধ্যে ৩ জন এজাহারভুক্ত ও একজন এজাহারবহির্ভূত।’

অভিযুক্ত ২৫ জনের যার যা দায়

অভিযোগপত্র অনুসারে আসামিদের তালিকার ক্রমিক নম্বর, অভিযোগের ধরন ও পরিচয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

১. মেহেদী হাসান রাসেল (২৪):

মেহেদী হাসান রাসেলের বাবার নাম মো. রুহুল আমিন মাতুব্বর, মা মিসেস ঝর্ণা আমিন। তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের সালথা থানার রাংঙ্গারদিয়া এলাকায়। বুয়েটের সিই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার আগে ও পরে পুরো বিষয়টি তিনি জানতেন। এমনকি হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত শেরেবাংলা হল থেকে আবরারের লাশ সরিয়ে ফেলার জন্য শিক্ষক ও চিকিৎসককে তিনি চাপ প্রয়োগ করেছেন। ঘটনার আগে ও পরে হত্যাকারীদের সঙ্গে তার কয়েকবার ফোনে এবং সরাসরি কথা হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। আট আসামির স্বীকারোক্তিতে তার নাম এসেছে।

২. মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩):

মুহতাসিম ফুয়াদের বাবার নাম আবু তাহের এবং মা সালমা ইয়াসমিন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার ঘোপাল ইউনিয়নে। বুয়েটের সিই বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।

আবরার হত্যার আগে ও পরে মুহতাসিম ফুয়াদ পুরো ঘটনাটি জানতেন। যারা মারধরে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। আবরারকে কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার না করলে কী করতে হবে, এসব বিষয়ে তিনি নির্দেশনা দেন। হত্যাকারীদের সঙ্গে একাধিকবার তার কথা হয়। বুয়েটের হলে শিবিরের কেউ থাকে কিনা এসব বিষয় তিনি জুনিয়রদের খোঁজ খবর নিতে বলতন। জড়িতদের মারধর করার বিষয় তিনি উৎসাহ দিতেন।

৩. মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২):

মো. অনিক সরকার ওরফে অপুর বাবার নাম আনোয়ার হোসেন, মা মোসাম্মৎ শাহিদা বেগম। রাজশাহীর মোহনপুর জেলার বড়উকুড়ি গ্রামে তাদের বাড়ি। অনিক বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারকে মারধর করেন অনিক। কয়েক দফায় সবচেয়ে বেশি মারধর করেন তিনি। আবরার অজ্ঞান হয়ে পড়লে তিনি বলেন- ঢং করতেছে।

৪. মো. মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩):

মো. মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্তর বাবার নাম মো. মাকসুদ আলী সরদার ওরফে মাকসুদ মাস্টার, মা মোসাম্মৎ রাশিদা খাতুন। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালী থানার কাপাসিয়া গ্রামে। বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। আবরার হত্যার আগে প্রথম যে সভাটি হয়, সেই সভার নেতৃত্ব দেন মেহেদী হাসান রবিন। আবরারকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর রবিনই তাকে প্রথম থাপ্পড় মারেন এবং শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেন। এরপর কয়েক দফায় আবরারকে মারধর করেন রবিন। আবরার হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি।

৫. ইফতি মোশাররফ সকাল (২০):

ইফতি মোশাররফ সকালের বাবার নাম ফকির মোশাররফ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদরের লক্ষ্মীকোল এলাকায়। বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এবং বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন তিনি। আবরারকে যে ১১জন মারধর করে সকাল তাদের মধ্যে একজন। তিনি আবরারকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করেন। অভিযোগপত্রে তাকে ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

৬. মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১)

মো. মনিরুজ্জামান মনিরের বাবার নাম মো. মাহাতাব আলী। গ্রামের বাড়ি দিনাপুরের বীরগঞ্জ থানার ভগীরপাড়া এলাকায়। বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরার হত্যাকাণ্ডের আগে যে মিটিং হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মনির। অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে মিটিংয়ে অংশ নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র এবং আবরারকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।

৭. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩):

মেফতাহুল ইসলাম জিয়নের বাবার নাম মো. শহিদুল ইসলাম, মা শাহনাজ বেগম। রংপুরের মিঠাপুকুর থানার দূর্গাপুর এলাকায় তার বাড়ি। বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। জিয়ন আবরারকে দুই দফায় মারধর করেন। আবার হত্যাকাণ্ডের আগে ৪ অক্টোবর যে মিটিং হয়, সেই মিটিংয়েও ছিলেন জিয়ন।

৮. মো. মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ (২০):

মো. মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদের বাবার নাম মৃত কামাল আহমদ, মা আফিয়া খাতুন। সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার হাজারীবাগ শাহী মসজিদ এলাকায় তার বাড়ি। বুয়েটের এমএমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান তিনি। মারধর ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেই রুমেই ছিলেন মাজেদ। এমনকি হত্যার পরও লাশ সরানো চেষ্টা করেন তিনি।

৯. মো. মুজাহিদুর রহমান ওরফে মুজাহিদ (২১):

মুজাহিদুর রহমানের বাবার নাম মোস্তাক আহম্মেদ, মা মোসাম্মৎ রোকসানা বেগম। গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলায়। বুয়েটের ইইই বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরাকে রুম