ঢাকা সোমবার, ৩০শে জুন ২০২৫, ১৭ই আষাঢ় ১৪৩২


ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পরই ঢাকা ছাড়েন সম্রাট: র‌্যাব ডিজি


৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৪

ছবি সংগৃহিত

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর এক দুই দিনের মধ্যে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকা ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

রবিবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে এ বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।

র‌্যাব ডিজি বলেন, পালানোর জন্য তিনি এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন যাতে তাকে সহজে খুঁজে না পাওয়া যায়। ক্যাসিনোবাণিজ্যের সঙ্গে সম্রাট জড়িত বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এ দেশে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। আইন মেনে চলবেন। কেউ যদি আইন অমান্য করেন, বেআইনি কাজে লিপ্ত হন, তাকে শাস্তি পেতে হবে।

সম্রাটকে কোন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা নিজেরাই তো লেখালেখি করেছেন। সো, মূলত আমরা তার সঙ্গে কথা বলব ক্যাসিনো নিয়ে।

‌‌বেনজীর বলেন, ক্যাসিনো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একাধিকবার তার নাম পেয়েছি। গণমাধ্যমেও আপনারা লেখালেখি করেছেন।

ক্যাসিনোর সঙ্গে আর কারা জড়িত জানতে চাওয়া হলে র‌্যাব ডিজি বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো বন্ধ করেছি। ক্যাসিনোর সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অভিযান চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, এটা একটা বড় ধরনের কৌশল। এর সুফল জনগণ আগামীতেও উপভোগ করতে পারবে। তবে এই ধারা ধরে রাখতে হলে শুধু একটি ফোর্স নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ফোর্সকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এর আগে রবিবার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় তার সহযোগী আরমানকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব। ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করে র‌্যাব।

যুবলীগ নেতা সম্রাট ঢাকার জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। জুয়া খেলাই তার পেশা ও নেশা। প্রতিমাসে ঢাকার বাইরেও যান জুয়া খেলতে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো ছিল। এর মধ্যে ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বাকি পাঁচটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সম্রাট নিজে ক্যাসিনো দেখাশোনা না করলেও তার ক্যাসিনো চালাতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের চার দিনের মাথায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ওইদিনই রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোয় অভিযান চালানোর পাশাপাশি গুলশান থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) নিকেতনে নিজের অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগ নেতা জিকে শামীমকে। যুবলীগের এই দুই নেতাকে গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়।

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের প্রথম দিন থেকেই সম্রাট কয়েকশ’ নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইলে তার নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নেন। পরে তার অবস্থান ও আটক নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এরই মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তার ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও তলব করা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর তার বিদেশগমনে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা।

নতুন সময়/এনকে