পল্লবীতে অবৈধ অটোরিকসা উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশের ঠেলা-ঠেলি

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে অবৈধ অটোরিকসা উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশের ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগের ঠেলা-ঠেলি চলছেই। আর এই সুযোগে সড়কে চলছে অবৈধ অটোরিকসা।
শুক্রবার পল্লবীতে যুবলীগ মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পির নেতৃত্বে অবৈধ অটোরিকসা বন্ধে সচেতনতামূলক পথসভা ও অবৈধ অটোরিকসা আটকে পুলিশে খবর দেওয়া হলেও পুলিশ দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে।
অবৈধ অটোরিকসা আটকে প্রথমে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলামকে ফোন করে তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি। ওসি তাকে জানায় এটি ট্রাফিকের দায়িত্ব। এই সময় নতুন সময়- এর পক্ষ থেকে ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি ট্রাফিকের দায়িত্ব।
পরবর্তীতে ট্রাফিক (পশ্চিম) বিভাগের ডিসিকে তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি ফোন করলে তিনি ওসি পল্লবীকে জানাতে বলে। এই সময় ডিসি জানায়, ভিতরের রোডে যে অবৈধ অটো রিকসা চলে তার দায়িত্ব ক্রাইম বিভাগের (থানা পুলিশের)। তখন তাকে জানান হয়, ভিতরের রোডের পাশাপাশি মেইন রোডেও অটো রিকসা আটকানো হয়েছে। তখন ডিসি অন্য একটি নাম্বার দেয়। সেই নাম্বারে ফোন করার পর একজন সার্জেন্ট আসে। একই সময় পল্লবী থানা থেকে পরিদর্শক (অপারেশান) এমরানুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর পাঁচটি অটো রিকসাকে ড্রাম্পিংয়ে পাঠানোর কথা বলা হয়।
অবৈধ অটো রিকসা নিয়ে পুলিশের ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগের ঠেলা-ঠেলি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এই অটোরিকসাকে নিয়ন্ত্রণ করে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। তবে পুলিশের বিরুদ্ধেই মূল অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে শুধু পুলিশের মিরপুর বিভাগের এই অটোরিকসা থেকে আয় মাসে দুই কোটি টাকা। এই টাকার ভাগ যায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। তাই এই অটোরিকসা বন্ধ করা কার পক্ষে সম্ভব হয় না। মাসে প্রতি অটো রিকসাকে রাস্তায় চলতে দিতে হয় ১৫০০ টাকা করে। রাজধানীর মিরপুর জুড়ে রয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার অটোরিকসা। ১০ হাজার অটোরিকসা থেকে উঠে দেড় কোটি টাকা। এছাড়া্ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে দেওয়া চার্জের কারণে মাসে দিতে হয় ৫০০ টাকা করে। এর থেকে আয় আরো ৫০ লাখ টাকা।
অটোরিকসা চালকরা মাসে ১৫০০ টাকা করে দেওয়ার কারণে নিজেদের রাস্তার রাজা ভাবে। বেপরোয়া গতিতে রিকসা চালায়। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এমন কি পথচারীদের সঙ্গে নিয়মিত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ পক্ষে থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করার ক্ষমতা রাখে না বলে তারা মনে করে।
পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে কিছু অটোরিকসা আটক করলেও পরের দিনই সেই অটোরিকসাগুলো আবারও রাস্তায় নেমে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশ টাকা খেয়ে রিকসাগুলো ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম নতুন সময়কে বলেন, থানা পুলিশ অবৈধ অটোরিকসা চালকদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেয়। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অটোরিকসা ধরার পর সেগুলো রাখার জায়গা নেই। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ আটো রিকসাগুলোর দায়িত্ব নেয় না। তাই আমাদের কিছু করার নেই।
পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম শামিম বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করি।
পল্লবী থানা যুবলীগের সভাপতি ও মহানগর (উত্তর) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি বলেন, অবৈধ অটো রিকসার বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রতিদিনই সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। গতকাল দুয়ারীপাড়াতে একজন গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়াও আটো রিকসা চালকরা পথচারী ও যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল রাতে এক সাইকেল আরোহীকে পূরবী স্ট্যান্ডে এক অটো রিকসা চালক মেরে গুরুতর আহত করেছে। এর প্রেক্ষিতে পূরবী কালসী স্ট্যান্ড থেকে অটো রিকসার বিরুদ্ধে এই জনসচেতনামূলক কর্মসূচি শুরু করেছি। প্রশাসন সাহায্য করলে এই অভিযান নিয়মিত করব।
বাপ্পি আরও বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। আমি এই অটো রিকসার বিরুদ্ধে পল্লবী ও রূপনগর থানায় ইতিপূর্বে জিডি করেছি।
তিনি বলেন, এটি মূলত: পুলিশের কাজ। আমরা শুধুমাত্র পুলিশকে সহযোাগিতা করতে পারি, এর বেশি কিছু নয়। গতকালই আমি এই কর্মসূচির কথা পল্লবী থানার ওসি এবং অপারেশানকে অবহিত করেছিলাম। আশা করব পুলিশ এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
নতুন সময়/এনকে