স্বামীকে ফেরত আনার কথা বলে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ কবিরাজের

অবশেষে রহস্য উন্মোচন হলো আলোচিত গৃহপরিচারিকা আয়েশা ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের। ভাটারা এলাকায় আয়েশা ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত মূল হোতা ভন্ড কবিরাজ নাজমুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, ১২ বছরের এক ছেলে সন্তান ও ৮ বছরের এক কন্যার জননী আয়েশা (২৮)। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে আয়েশার এক যুগের সংসার ভেঙ্গে যায় বছর দুই হল। স্বামী ট্রাক ড্রাইভার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে থাকে টাংগাইলে। আয়েশা গৃহপরিচারিকার কাজ করে অতিকষ্টে বেঁচে আছে দুই সন্তানকে নিয়ে। থাকে ভাটারার এক ভাড়া বাড়ীতে।
স্বামীকে পেতে অস্থির হয়ে ওঠে আয়েশা। প্রতিবেশী নাজমুল যে পেশায় কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রাইভেট গাড়ীচালক হলেও বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসায়ী এরমধ্যে সুযোগ নেয়। আয়েশার সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরী করে। আয়েশাকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, এক কবিরাজের বাণ মারার কারণেই তার স্বামী জসিম দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। আর আয়েশাকে ছেড়ে দ্বিতীয় বউ নিয়ে অন্যত্র বসবাস করে এমনকি নিজের ছেলে মেয়েদের উপরেও নেই কোন টান। এরকম অবস্থা থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, কিভাবে ফেরৎ পাওয়া যাবে স্বামীকে, ছেলেমেয়েরা কিভাবে পাবে তাদের বাবার আদর-ভালোবাসা? এই প্রশ্ন গুলোর পেছনের হতাশায় সব হারিয়ে ফেলে আয়েশা, এমনকি তার নিজের জীবনও।
ঘটনার দিন রাত ১০টার থেকে বিভিন্ন সময় আয়েশা প্রতিবেশী নাজমুলকে অনেকবার ফোন দিতে থাকে। সব শেষ রাত দেড়টায় আয়েশার সঙ্গে কথা হয় নাজমুলের। কথা অনুযায়ী নাজমুল তাড়াতাড়ি আয়েশার বাসায় যায়। তার রুমে একটি খাট আছে। খাটের উপর ছোট ছেলে ঘুমিয়ে ছিল। আয়েশার স্বামীকে বশে আনার উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে ইতোমধ্যে নাজমুল প্রায় ২৪০০ টাকা নেয় এবং কবিরাজের কথা বলে তার সঙ্গে অবৈধ যৌনমিলন করে। এরমধ্যেই আয়েশার স্বামী জসিম উদ্দিন টাংগাইল থেকে ঢাকায় আসে তার বোনের বাসায় উঠে ছোট বউকে সঙ্গে নিয়ে। সুযোগ নেয় নাজমুল। আয়েশাকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে কবিরাজের মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে। পরবর্তীতে ৪ জুলাই রাতে নাজমুলের সঙ্গে আয়েশার অনেক কথা কাটাকাটি হয়। নাজমুল তার কাছে যেতে চাইলে সে উত্তেজিত গলায় বলে যে আমার টাকা নিয়েছেন, আমার চরিত্র নষ্ট করেছেন, এখন আমার স্বামীও আসল না তাহলে আমার টাকা ফেরৎ দেন নইলে ভাল হবে না। এতে দুশ্চিন্তায় পড়ে নাজমুল। তাই পকেটে করে ঘুমের ঔষুধ নিয়ে আয়েশার ঘরে যেয়ে তাকে বুঝায় যে আয়েশাকে ‘বাঁধা বান’ মেরেছে তার ছোট সতীন হামিদা। তাই কবিরাজ ঔষুধ দিয়েছে আয়েশাকে খেতে হবে। বলে পানির বোতলে অল্প একটু পানির মধ্যে ঔষুধ ২টা গুলিয়ে খাইয়ে দেয়।
এবার তার সঙ্গে একবার এমনি যৌনমিলন করে। তাকে বুঝায় যে এটা কবিরাজের নির্দেশ। পরে সে যখন নাজমুলের সঙ্গে একটু তর্ক করে যে, কিভাবে তার স্বামীকে তার নিজের কাছে ফেরৎ আনা যাবে তখন নাজমুল তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়, যেহেতু তাকে ‘বাঁধা বান’ মারা হয়েছে তাই তাকে হাত পা বেঁধে নাজমুলের সঙ্গে যৌন মিলন করতে হবে। নাজমুলের কথা মতো আয়েশার হাত-পা বাধা হয়। এর মধ্যে ঔষধের ক্রিয়ায় সে অচেতন হয়ে পড়ে। নাজমুল তখন তার দিয়ে আয়েশার গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। বিছানার উপরে ঘুমন্ত ছোট ছেলে সন্তান আর মেঝেতে ঘর সংসার ফিরে পেতে মরিহায় অসহায় মা এর নিথর দেহ এই দৃশ্য যে কাউকেই নাড়া দেয়। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচনে কাজ শুরু করে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ। এদিকে নিহতের পরিবার আয়েশার স্বামী ও সতীনসহ অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা রুজু করে ভাটারা থানায়। কিন্তু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গোয়েন্দাদের নিরলস পরিশ্রম বৃথা যায়নি। গ্রেফতার হয় কথিত কবিরাজ, ধর্ষক, হত্যাকারী নাজমুল। অভিযানটি গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগ এর উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমানের নির্দেশনায় এডিসি মোঃ শাহজাহান পিপিএমের তত্ত্বাবধানে, এডিসি (টিম লিডার) মোঃ গোলাম সাকলায়েনের নেতৃত্বে গুলশান জোনাল টিম পরিচালনা করে।