ফ্রান্সে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত চিঠি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব

প্যারিসে ইহুদিবিদ্বেষ (অ্যান্টি-সেমিটিজম) ও সহিংসতা ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনকে লেখা একটি চিঠির ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত চার্লস কুশনারকে তলব করেছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের বরাতে এ তথ্য জানায় আল জাজিরা।
চার্লস কুশনার গত রোববার (২৪ আগস্ট) ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ প্রকাশিত একটি উন্মুক্ত চিঠিতে ফ্রান্সের ইসরায়েল-বিরোধী অবস্থান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা করেন।
তিনি লেখেন, ‘ইসরায়েলকে হেয় করে দেয়া বক্তব্য ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার মতো পদক্ষেপ চরমপন্থীদের সাহস জোগায়, সহিংসতা বাড়ায় এবং ফ্রান্সে ইহুদি জনগণের জীবনের জন্য হুমকি তৈরি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে, অ্যান্টি-সায়োনিজম মানেই অ্যান্টি-সেমিটিজম— এ ধরনের বিদ্বেষ ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য বিপজ্জনক।’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ প্রকাশিত হওয়ার পর ফ্রান্স দ্রুত এই চিঠির প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়।
এক বিবৃতিতে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় ‘ফ্রান্স এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। রাষ্ট্রদূতের এই অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য।’
ফ্রান্স ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম মোকাবেলায় সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,’ বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
এছাড়াও, বিবৃতিতে বলা হয়, কুশনারের মন্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী, বিশেষ করে কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এসব মন্তব্য ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক রয়েছে এবং মিত্র দেশগুলোর মধ্যে যে বিশ্বাস থাকা উচিত— সেটির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’
তবে, ঘটনার মোড় ঘোরে যখন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর কুশনারের মন্তব্যের পক্ষে অবস্থান নেয়।
‘রাষ্ট্রদূত কুশনার ফ্রান্সে আমাদের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং তিনি আমাদের জাতীয় স্বার্থ বাস্তবায়নে দারুণ কাজ করছেন,’ বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র টমি পিগট।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ধারাবাহিকভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে— প্রতিদিনই ডজন ডজন মানুষ নিহত হচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ফ্রান্সসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যদিও তারা ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য, কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবুও, এ ধরনের পদক্ষেপ ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ করেছে।
চার্লস কুশনার, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের পিতা। এর আগে, ২০০৫ সালে কর ফাঁকি ও সাক্ষ্যপ্রমাণে হস্তক্ষেপের দায়ে দণ্ডিত হন এবং পরে ট্রাম্প তাকে ক্ষমা করে দেন।
এই চিঠি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আগের একটি বিবৃতির ধারাবাহিকতায় আসে, যেখানে নেতানিয়াহুও ফ্রান্সের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্তকে ইহুদি-বিরোধীতার সঙ্গে যুক্ত করেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় নেতানিয়াহুর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে তা ‘ঘৃণ্য’ ও ‘ভুল’ বলে আখ্যায়িত করে এবং জানায়, ‘এই অভিযোগের জবাব অবশ্যই দেয়া হবে’।
ফরাসি প্রেসিডেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি বিভ্রান্তি ও অপব্যাখ্যার সময় নয়— এটি হচ্ছে দায়িত্বশীলতার সময়।’
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ইসরায়েলের সমর্থকরা প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়নের সমালোচনাকে চাপা দিতে এবং বিতর্ক থামাতে ‘ইহুদি-বিরোধীতা’র অভিযোগ ব্যবহার করে থাকেন।
সূত্র: আল জাজিরা।