ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৬শে জুন ২০২৫, ১৩ই আষাঢ় ১৪৩২


করোনার উৎপত্তি নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক তদন্তে রাজি চীন


১০ মে ২০২০ ১৬:৪৫

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি কোনো গবেষণাগারে, নাকি প্রাকৃতিকভাবে, তা নিয়ে প্রথম থেকেই মানুষের মনে সন্দেহ রয়েছে। তাই ভাইরাসটির উৎপত্তি নিশ্চিত করতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তে দাবিতে চীনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছিল। কিন্তু চীনা কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, তদন্তের জন্য তারা আন্তর্জাতিক কোনো দলকে চীনে ঢুকতে দেবে না। 

অবশেষে বেইজিং সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৭ মে) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনার বিষয়টি তদন্ত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্যানেলকে সব ধরনের সহায়তা দেবে চীন। তবে করোনা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্র বরাবর মিথ্যাচার করছে বলেও দাবি বেইজিংয়ের।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে অজ্ঞাত কারণে মানুষের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত হয়। নতুন ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করে চীনের বিজ্ঞানীরা গত ৯ জানুয়ারি জানান, এটি সার্স করোনা ভাইরাস গোত্রের। এর দুই দিনের মাথায়, ১১ জানুয়ারি সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু দেখে বিশ্ব। পরবর্তীতে ডব্লিউএইচও ভাইরাসটির নাম দেয় নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। 

গত ৩০ জানুয়ারি করোনা ভাইরাসকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। আর গত ১১ মার্চ একে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে সংস্থাটি। 

মার্কিন জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৪১ লাখ ৭২৬ জন। সুস্থ হয়েছে ১৪ লাখ ৪১ হাজার ৪৭৪ জন। বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৩১ জন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই চীন তথ্য লুকিয়ে রাখার কারণেই বিশ্বে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করে আসছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, টিকা আবিষ্কারের বৈশ্বিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ভাইরাসের নমুনা দেয়নি চীন। তিনি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্তেরও দাবি করেন।

বিশ্বের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও মনে করেন, উহানের একটি বন্য প্রাণীর বাজারে আনা প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও দাবি করে আসছেন, ভাইরাসটি চীনের গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে। তবে তাদের এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

এছাড়া করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে অতিমাত্রায় উদাসীনতার জন্য ডব্লিউএইচওকে দায়ী করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে সংস্থাটির অতিরিক্ত চীন ঘেষা ও পক্ষপাতের অভিযোগে অর্থসহায়তা স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র করোনা মোকাবিলায় নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত বলে আগে থেকেই দাবি করে আসছে বেইজিং। 

বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিংয়ের প্রেস ব্রিফিংয়েও একই অভিযোগ আনা হয় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ভাইরাসটি চীনে উৎপত্তি হয়নি দাবি করে চীনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেখানে বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি, সেখানে পম্পেও দ্রুতই উপসংহার টেনে দিলেন যে ভাইরাসটি উহানের গবেষণাগারে তৈরি। তিনি কোথায় পেলেন এই প্রমাণ। প্রমাণ আমাদের দেখাক। তিনি প্রমাণ দেখাতে পারেননি।’ 

তিনি বলেন, ‘উৎপত্তির প্রশ্নসহ করোনা ভাইরাস–সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ডব্লিউএইচওকে সব ধরনের সহায়তার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এটা রোধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি।