ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪শে জুন ২০২৫, ১০ই আষাঢ় ১৪৩২


মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ করতে হবে: গাম্বিয়া


১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০০

গাম্বিয়ার বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবাকর তামবাদু বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারকে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে এই বর্বরতা ও হিংস্রতা বন্ধ করতে হবে, যা আমাদের সবার বিবেককে ব্যথিত ও ব্যথাহত করে যাচ্ছে। দেশটিকে নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।

মঙ্গলবার মামলার বিচারের শুনানির শুরুতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারকে নির্দেশ দিতে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে গাম্বিয়া।-খবর রয়টার্স ও এএফপির

রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যার মামলায় দেশের হয়ে লড়তে এদিন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এসে হাজির হন মিয়ানমারের কার্যত নেতা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচি।

তিনি যখন নেদারল্যান্ডের দ্য হেগ শহরে আসেন, তখন দেশে তার পক্ষে হাজার হাজার লোক মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

গত নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনিপ্রক্রিয়া শুরু করে গাম্বিয়া। এতে বলা হয়, বৌদ্ধসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অধীন বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, দ্য হেগের পিস প্যালেসে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বেলা ৩টায় শুরু হওয়া এ শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির নেত্রী অং সান সুচি।

তিনি গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের কারণে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন।

আর আইসিজেতে এই মামলা করা ওআইসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়ার পক্ষে এ শুনানিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ১৫ বিচারকের সঙ্গে প্যানেলে আছেন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত দুই বিচারক। তিন দিনের শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত দেবেন।

রাখাইনের নিপীড়িত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরাও এ শুনানি উপলক্ষে দ্য হেগের পিস প্যালেসে উপস্থিত হয়েছেন। শুনানি শুরুর আগে তারা ন্যায়বিচারের জন্য প্রার্থনাও করেছেন।

পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট মুসলিম দেশ গাম্বিয়া। ২০১৭ সালের আগস্টে শুদ্ধি অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ব্যাপক নৃশংসতা চালিয়েছে মিয়ানমার। এতে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের তদন্তকারী দল।

তামবাদু বলেন, গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মধ্যে এটা কঠিন একটা বিতর্ক। মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতির মধ্যে নিয়ে আসার মাধ্যমে এই কনভেনশনে আমরা কেবল রোহিঙ্গাদের অধিকারই না, রাষ্ট্রীয় পক্ষ হিসেবে নিজেদের অধিকারও রক্ষা করতে চাই।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

২২ বছর বয়সী হাসিনা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, আগুন দিয়ে আমাদের গ্রাম ভস্মীভূত করে দেয়ার সময় বহু নারীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ধর্ষণ করেছে। যাদের মধ্যে আমিও রয়েছি। আমি, আমার আত্মীয় ও বন্ধুদের ওপর তারা এই নৃশংসতা চালিয়েছে। তাদের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি আমি এই কথা বলতে পারবো। কারণ আমি মিথ্যা বলছি না।

মঙ্গলবার বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে শত শত রোহিঙ্গাকে পাহাড় চূড়ায় জড়ো হয়ে ‘গাম্বিয়া! গাম্বিয়া!’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। অনেকে মসজিদে নামাজ পড়ে দেয়া করছেন, কাউকে কাউকে রোজা রাখতেও দেখা গেছে।