ঢাকা বুধবার, ২০শে আগস্ট ২০২৫, ৬ই ভাদ্র ১৪৩২

প্রতারিত হয়ে পেশা প্রতারণা


৫ আগস্ট ২০২২ ০৩:৫৪

ছবি- সংগৃহিত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানী লিমিটেড নামে চাকরির ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারণা পূর্বক বিপুল সংখ্যক চাকরি প্রার্থীদের অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গত বুধবার রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মাছুম বিল্লাহ (৩৩), খাইরুল আলম রকি (২০), কামরুজ্জামান ডেনিশ (২২), মাহমুদুল হাসান (৩২), মাসুদ রানা (২৪) ও এসএম রায়হান (২৪)।

র‌্যাব জানিয়েছে, আসামিরা নিজেরাই চাকরির জন্য প্রতারিত হয়েছে এবং এই প্রতারণাকেই তারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টার কারওয়ানবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড, সহকারী সুপারভাইজার, সুপারভাইজার, সিকিউরিটি ইনচার্জ, মার্কেটিং অফিসার (পুরুষ), মার্কেটিং অফিসার (মহিলা), অফিস সহকারী, লেডি গার্ড, অফিস রিসিপশনস (মহিলা) পদে চাকরি দেওয়ার নামে ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। এই ধরনের আকর্ষনীয় অনলাইন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চক্রটি প্রতারনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। এসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩ একটি তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব-৩।

র‌্যাব জানায়, এসময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৮ টি মোবাইলফোন, ৮ টি সিমকার্ড, নগদ ৫ হাজার ৫৪০ টাকা, ডেক্সটপ কম্পিউটার সেটাপ, ৪ টি ক্যাবল, ১টি ল্যাপটপ, ২ টি রাউটার, ২ টি স্ট্যাম্প প্যাড, এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড নামে ২ টি ব্যানার, ২ টি ডাইরি, শতাধিক ভর্তি ফরম, দুই শতাধিক সিভি, ২ টি চেকবই, ৫ টি স্ট্যাম্প, ২ টি অঙ্গীকারনামা, ১ টি রেজিষ্টার, অর্ধ শতাধিক ডিলার/পরিবেশক নিয়োগপত্র, ভিজিটিং কার্ড, পণ্য তালিকা, মূল্য তালিকা, অর্ধ শতাধিক ডিপো এবং নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামসর্বস্ব নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের চাকুরির বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতারণার শিকার হয়। এরপর তারা নিজেরাই প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তারা সকলে পেশাদার সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা সুপরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে চাকুরি প্রার্থীদের সাথে প্রতারণা করত।

তিনি আরও বলেন, এ প্রতারক চক্রের মূলহোতা মো. মাছুম বিল্লাহ সাকিলা সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামে ২০১৯ সালে একটি ট্রেড লাইসেন্স নেন। কিন্তু ইতোমধ্যে করোনার শুরু হওয়ায় তিনি ব্যবসা শুরু করতে পারেননি এবং পরবর্তীতে তিনি আর লাইসেন্সও নবায়ন করেননি। তিনি সাকিলা সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানী লিমিটেডের নামে একটি ভূয়া লাইসেন্স বাধাই করে তাদের অফিসের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখেন।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, প্রতারণার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে মাছুম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় চমক সৃষ্টি এবং প্রতরণার উদ্দেশ্যে তাদের বিজ্ঞপ্তিতে প্রথমেই “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত, এসএসএফ প্রাইভেট কোম্পানী লিঃ, গভ. রেজিঃ নং সি-১৫৭৭৬৩” লেখা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতেন। যা দেখে চাকুরি প্রার্থীরা ওই প্রতিষ্ঠানকে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান মনে করতেন। এছাড়াও এসএসএফ একটি বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার নাম হওয়ায় চাকুরি প্রার্থীরা ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানকে তাদের অঙ্গসংগঠন মনে করতেন।

বিজ্ঞপ্তিতে সিকিউরিটি গার্ড, সহকারী সুপারভাইজার, সুপারভাইজার, সিকিউরিটি ইনচার্জ, মার্কেটিং অফিসার (পুরুষ), মার্কেটিং অফিসার (মহিলা), অফিস সহকারী, লেডি গার্ড, অফিস রিসিপশনস (মহিলা) পদের বিপরীতে উচ্চ বেতন লিখা থাকত। এছাড়াও আকর্ষনীয় সুযোগ হিসেবে বিনা খরচে থাকার ব্যবস্থা, খাওয়ার সু-ব্যবস্থা, কর্মদক্ষতার উপর পদোন্নতি, অভিজ্ঞতা না হলেও চলবে, কর্মঠ ও সুদর্শন হতে হবে, এসব লোভনীয় প্রস্তাব উল্লেখ করা থাকত এবং যোগাযোগের জন্য মোবাইল নাম্বার দেওয়া থাকত।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐই বিজ্ঞপ্তি দেখে অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতী, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এবং তারা প্রতারণার শিকার হয়ে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতো এবং অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে। অবশেষে ভিকটিমদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই প্রতারক চক্রের সদস্যদের আমরা গ্রেপ্তার করি।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

নতুনসময়/আইএ