ঢাকা সোমবার, ২৩শে জুন ২০২৫, ১০ই আষাঢ় ১৪৩২


মন্ত্রীর হাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির প্রতিবেদন


১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫০

দুদক লোগো

বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর অফিস কক্ষে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক এর নিকট দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক টিম কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতি সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

এসময় কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই মূলত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দমনের কাজ স্বল্প পরিসরে শুরু হয়। আইনি অনুশাসনে কমিশন ২০১৭ সালে ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও রয়েছে। ইতেমধ্যেই ভূমি, শিক্ষা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সড়ক বিভাগসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। সে সকল প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সাদরে গ্রহণ করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনে দুর্নীতির ১১ টি ক্ষেত্র শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে কমিশনার ড. মোজাম্মেল বলেন, এসব দুর্নীতির উৎস বন্ধে ২৫ টি সুপারিশও রয়েছে এ প্রতিবেদনে। এ প্রতিবেদনের আলোকে মন্ত্রণালয় যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দুর্নীতি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম । কারণ প্রতিকার সময় এবং অর্থের সাথে সংশ্লিষ্ট।

সরকারের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর কথা উল্লেখ করে দুদক কমিশনার বলেন, এবারের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শুন্য সহিষ্ণুতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত শুন্য সহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করবে এবং করছে। দুর্নীতির ঘটনা ঘটলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রতিবেদন সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসা সেবা প্রদান, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইক্ইুপমেন্ট ব্যবহার, ঔষধ সরবারাহসহ বিভিন্ন দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে।

এসব উৎস বন্ধে তথ্য বহুল সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন, মালামাল রিসিভ কমিটিতে বিশেষজ্ঞ সংস্থার সদস্যদের অন্তর্ভুক্তিকরণ, ঔষধ ও মেডিকেল যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন ও অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে নিজস্ব স্থায়ী চিকিৎসক/কর্মচারী ও কার্যনির্বাহী কমিটি ইত্যাদি রয়েছে কী-না এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলির নীতিমালা প্রণয়ন, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে ঔষেেধর নাম না লিখে জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা; ইন্টার্নশীপ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা এবং বর্ধিত এক বছর উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে থাকা বাধ্যতামূলক করা, চিকিৎসকগণের (সরকারি/বেসরকারি) পদোন্নতির জন্য সরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে পিএসসি এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং পিএসসির প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ প্রদান করা যেতে পারে ইত্যাদি সুপারিশ রয়েছে।

চিকিৎসকদের উপস্থিতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, এ বিষয়ে দুদক কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। এগুলো কোনো অভিযান নয়, এটি কমিশনের আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম মাত্র। এ জাতীয় প্রতিরোধমূল কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে দুদক কমিশনার বলেন, যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জনগণের কোন ক্ষতিসাধন কিংবা ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেন তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দুদকের রয়েছে। যদি ও কমিশন এই আইন প্রয়োগ করতে চায় না। কমিশন বিশ্বাস করে সবাই স্ব-স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।

এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এই প্রতিবেদনটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হবে। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যূতি উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায় । দুর্নীতি থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় । স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার, তাই দুর্নীতি প্রশয় দেওযা হবে না। তিনি বলেন, ভালো লোক থাকলে ভালো যন্ত্রপাতি ক্রয় করা যায়। কিছু লোককে ইতোমধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে না। সকল ক্রয় হবে নিড বেইজড। চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি মনিটিরিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে সেল গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।

প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়য়ে উভয় বিভাগের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

নতুনসময়/এসইউএ/আইএ