ঢাকা রবিবার, ২২শে জুন ২০২৫, ৯ই আষাঢ় ১৪৩২


মর্গে পড়ে আছে হতভাগা রবার্ট!


২৮ জানুয়ারী ২০১৯ ০৬:৩৫

মর্গে পড়ে আছে হতভাগা রবার্ট

রবার্ট মায়রন বার্কার (৭৮) নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের মরদেহ সৎকার নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশের পুলিশ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । তার মরেদেহ সৎকার করা হবে, নাকি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হবে এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পুলিশ । কারণ বেওয়ারিশ হিসেবেও সৎকার করা যাচ্ছে না।

রবার্টের বাংলাদেশী স্ত্রী মাজেদা এ দপ্তর থেকে ওই দপ্তরে ইঁদুর দৌড় দৌড়াচ্ছনে। বিষয়টি নিয়ে দেশটির ঢাকাস্থ দূতাবাসে নতুন সময়ের পক্ষ থেকে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পাসপোর্ট অনুযায়ী, রবার্ট জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। জন্ম ২৪ জুলাই ১৯৩৯, ধর্ম খ্রিস্টান। পাসপোর্ট নম্বর- ৪৫২০৮৬০৮৮। ঠিকানা ইন্ডিয়ানা, ইউএসএ। ভিসার বিবরণ অনুযায়ী, রবার্ট আনপেইড বা অবনৈতিক র্কমর্কতা।

গত বছরের ২৫ মে অসুস্থ হয়ে মারা যান রবার্ট। এরপর গত আট মাস ধরে তার লাশ পড়ে আছে ঢামেকের মর্গে, কেউ তার খোঁজ নিতেও আসেনি। বংলাদেশে থাকা স্ত্রী মাজেদা বেগম(৫৫) মরদেহের কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না। মাজেদা জানান, তিনি উত্তরা কমিউনিটি হাসপাতালে আয়া পদে চাকরি করতেন। প্রায় ১১ বছর আগে ওই হাসপাতালে রোগী হিসেবে আসনে রবার্ট। তাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ না থাকায় আয়া মাজেদা তার সেবা করেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেম হয় এবং ববার্টের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল খ্রিষ্টান ধর্মমতে রাজধানী বাড্ডার একটি চার্চে গিয়ে বিয়ে হয়।

কাবিননামা অনুযায়ী, মাজেদার বাবার নাম জয়নাল আবেদীন। রবার্টের ঘরে মাজেদার কোনো সন্তান নেই । তবে আগের ঘরে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তারা দক্ষিণখানের ৭৩৯/২ চালাবন (মাটির মসজিদ) এলাকায় অ্যাডভোকেট মুকুল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন । রবার্ট কোন সংস্থায় কাজ করতেন জানাতে পারননি মাজেদা। বলেন,‘রবার্ট গরিব উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতেন। আমেরিকা থেকে টাকা আসত। তিনি ওই টাকা গরিব মানুষকে দিতেন। আমাকে হাত খরচের জন্য মাসে দুই তিন হাজার টাকা করে দিতেন।’

মাজেদা নতুন সময়কে বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর রবার্ট দুইবার আমেরিকা গিয়েছেন।কিন্তু আমেরিকা থেকেও তার কোনো আত্মীয় বাংলাদেশে আসেননি। তিনি মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেন।

আমেরিকায় তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। মাজেদা আরও বলেন ‘রবার্ট কত বেতন পেতেন, কী করতেন এসব আমি কখনো জানতে চাইনি। তবে তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। গত বছরের মে মাসে রবার্ট স্ট্রোক করেন। তাকে দক্ষিণখানের কেসি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মে মারা যান। মৃত্যুর সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিবারে জানানোর চেষ্টা করেও জানাতে পারিনি ।পরে পুলশিকে খবর দেওয়ার পর তারা সুরতহাল প্রতিবেদন করে এবং লাশ ঢামেকের মর্গে রাখে। দূতাবাসের লোকজন তার কাছ থেকে অরজিনিাল পাসর্পোট রেখে দেন এখন সেটাও ফেরত দিচ্ছে না। এমনকি কোনো ধরণের সহযোগিতাও করছে না।’

মাজেদা বলেন, ‘রবার্ট চাকরির সুবাধে বাংলাদেশে এসেছেন। তার ভিসার মেয়াদও আছে। কিন্তু তিনি আমেরিকান স্ত্রী-সন্তানের ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি সর্বশেষ যেবার আমেরিকা গিয়েছেন, ওই সময় তার দুই সন্তান ও স্ত্রী তার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি এক বন্ধুর বাসায় কিছুদিন থেকে আবার বাংলাদেশে চলে আসেন। পরে আর দেশে যাননি। রবার্টের ফোন থেকে ছেলে মেয়েদের মৃত্যু সংবাদ দেওয়ার জন্য অনেকবার ফোন করেছি কিন্তু তারা কেউ ফোন ধরে না।’


দক্ষিণখানে মাজেদার ঘরে গিয়ে রবার্টের আমেরিকান স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের ছবি ছাড়া তার পাসর্পোটের ফটোকপি মাজেদার সঙ্গে বিয়ের ছবি, কাবিননামা, এসট্রান্স মেম্বার আইডি র্কাড, ভিক্টোরি স্কয়ার ১৬৬০ নর্থব্রডওয়ে স্প্রিংফিল্ড লেখা একটি কার্ড পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মাজেদার অ্যালবামে পথশশিুদের সঙ্গে রবার্টের কয়েকটি ছবি আছে।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, রবার্টের অসুস্থতাজনিত মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ মরদেহ রেখে যাওয়ার পর থেকে এখনো ফ্রিজে আছে। হাসপাতালের মর্গ সহকারী সেকান্দার জানান, প্রায় আট মাসেও লাশটি কেউ নিতে এবং দেখতে আসেনি।

দক্ষিণখান থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘রবার্ট মারা যাওয়ার পর আমরা থানায় একটি জিডি করি যার নম্বর ১৪৮৬, ২৫ মে, ২০১৮। সুরতাহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্ত করা হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় এই দেশে তার মরদেহ সৎকার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া দূতাবাসেরও ছাড়পত্র প্রয়োজন। সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। রবার্টের স্ত্রী মাজেদা খুব গরিব। মরদেহ সৎকার করার মতো সামর্থও তার নেই। তিনি বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না।’


আইকে/এস ইউ এ